বিএনপি ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নিলে তফসিল পরিবর্তন করার ইঙ্গিত দিে য়ছে নির্বাচন কমিশন। ইসি কমিশনার রাশেদা সুলতানা গতকাল সোমবার সাংবাদিকবদের জানিয়েছেন বিএনপি নির্বাচনে আসলে ফিরিয়ে দেবে না কমিশন। তিনি বলেন, বিএনপিসহ যে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে আসার বিষয়ে এখনো কোন ঘোষণা দেয়নি, তারা মত পাল্টে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাহলে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাশেদা সুলতানা। এ সময় তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ওনারা যদি ফিরতে চান, ইতিপূর্বেও আমার জানা মতে, ওনারা একটু পরেই এসেছিলেন এবং ওনারা সে সুযোগটা পেয়েছিলেন। ওনারা যদি আসতে চান, ইচ্ছা প্রকাশ করেন, সেক্ষেত্রে কীভাবে কী করা যাবে, নিশ্চই আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করবো, সিদ্ধান্ত নেবো।
ওনারা আসতে চাইলে নিশ্চই আমরা ওয়েলকাম করবো, ওনারা আসছে চাইছেন, আমরা ফিরায় দিবো, এটা হবে না। ওনারা নির্বাচনে না আসলে এক ধরণের শূন্যতা থাকবে এবং এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিএনপি আসলে তো বিবেচনা করবোই। আমরা তো চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটা সুন্দর ইলেকশন হোক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওনারা এসেছিল। সেসময় তাদেরকে একটু স্পেস দেয়া হয়েছিল।
মাঠের রাজনীতি শান্ত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যখনই একটা বিভাজন তৈরি হয়ে গেছে তখন রাজনীতি একটু পাল্টে গেছে। তবে পরিস্থিতি অশান্ত হয়েছে বলে সেটা শান্ত হবে না বলে মনে করেন না তিনি। তিনি বলেন, এটা যেকোনো সময় শান্ত হতে পারে। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনার আমাদের প্রতি আস্থা রাখেন, আসেন, ইলেকশন করেন, নিঃসন্দেহে আপনারা একটা ভাল, সুষ্ঠু, সুন্দর, ইলেকশন করার সুযোগ পাবেন এবং ভোটাররা এসে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, তাদের যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করবে। নিশ্চই আমরা সেটা করার চেষ্টা করবো। রাজনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটার উদ্যোগ নেয়ার আর কোন সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন না। কারণ তফসিল এরইমধ্যে ঘোষণা করা হয়ে গেছে। এই সুযোগটা নির্বাচন কমিশনের কখনোই ছিল না বলে জানান তিনি।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই সূচি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।
তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেও বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিতে রয়েছে। তাদের দাবি, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। গত ১৬ নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সকল দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সর্বদা স্বাগত জানাবে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।
সংলাপের বার্তা দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেও। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও বিএনপি দ্বিধায় ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে তাদের আলোচনা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোট গড়ে বিএনপি ভোটে অংশ নেয়। ঐক্যফ্রন্টের অনুরোধে মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়িয়ে ২৩ ডিসেম্বরের ভোট পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয় সেবার।
কিন্তু নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি অভিযোগ তোলে, ভোট হয়ে গেছে ‘আগের রাতেই’। শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি রাখেননি বলেও অভিযোগ করে দলটি। এবার তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, উনারা যদি আসেন, আমরা কমিশনাররা বসব। আইন-কানুন দেখব। তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয় অগ্রিম কিছু বলতে পারব না। এলে তো বিবেচনা করবই। অবশ্যই করব। আমরা তো চাই সব দল এসে একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ওই নির্বাচনে কিন্তু উনাদের জন্য একটু স্পেস তৈরি করা হয়েছিল। যেভাবে আইনে আছে, সেভাবেই করা হবে। ডিটেইল আর কিছু বলব না। উনারা এলে আমরা ওয়েলকাম করব। এটার জন্য আইন অনুযায়ী যেভাবে পথ সৃষ্টি করতে হবে, সেভাবে করব। কিন্তু আগেই বলব না।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর গত করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলেরও শেষ দিন, সে কারণে তফসিল পুনঃনির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাশেদা সুলতানা বলেন, এই বিষয়টাতে আমরা কিছুই বলব না। অগ্রিম বলার সময় এখনো আসে নাই। যখন আসবে, যেটা হবে সেটাই বলব। পরিস্থিতি যখন আসবে, পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অগ্রিম এ বিষয়ে কোনো কথাই বলব না। বলা উচিত না। বলেন, যদি সময় বাড়ানো প্রয়োজন হয়, বাড়ানো হবে। যদি বাড়ানোর মধ্যে না হয়ে, এমনিই হয়, তাহলে হবে। কোনো অসুবিধা নাই। যদি এই তফিসলের মধ্যেই আসেন, তাহলে তো তফসিলে হাত দেওয়ার দরকার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সুযোগ এখনও আছে বলে মনে করেন তিনি।
মাঠে রাজনীতিতে যখন বিভাজন তৈরি হয়েছে, তখন শান্ত নাকি অশান্ত তা আমার বলতে হবে না। আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন। জনগণও দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু অশান্ত আছে, তাই বলে শান্ত হবে না এমন কোনো কথা নেই। যে কোনো মুহূর্তে শান্ত হতে পারে। দলগুলোর উদ্দেশে রাশেদা সুলতানা বলেন, আমাদের প্রতি আস্থা রাখেন। আসেন, নির্বাচন করেন। নিঃসন্দেহে আপনারা একটা ভালো সুষ্ঠু, সুন্দর, নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। ভোটাররা এসে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনয়ন করবেন। নিশ্চয় আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করব।
ভোরের আকাশ/অ
মন্তব্য