-->

অনুমতি না পেলেও কাল ঢাকায় সমাবেশ করবে জামায়াত

এম. সাইফুল ইসলাম
অনুমতি না পেলেও কাল ঢাকায় সমাবেশ করবে জামায়াত

এম. সাইফুল ইসলাম: প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না পেলেও ঢাকায় আগামীকাল সোমবারের পূর্ব ঘোষিত মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে জামায়াতে ইসলামী। এখনো অনুমতি না মিললেও এই কর্মসূচি সফল করতে শনিবার দলটি দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছে।

 

এছাড়া থানা ও ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সমাবেশে প্রশাসনের অনুমতি না পেলে দলটি কর্মসূচি পালনে কৌশল গ্রহণ করতে পারে। কৌশলের অংশ হিসেবে সময় ও স্থান পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন পরে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কর্মসূচি পালনে দৃঢ় অবস্থানে জামায়াত।

 

জামায়াত নেতারা বলছেন, শুক্রবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতকে বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতির সিদ্ধান্ত না দিলেও বিষয়টি তিনি দেখছেন। ফলে তারা আশা করছেন, প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে পারবেন। তবে, অনুমতি না পেলেও কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

 

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ শাখা আগামীকাল সোমবার বেলা ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল গত রোববার। ওই দিন কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ই-মেইলে আবেদন করে দলটি।

 

আবেদনে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ, জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাসহ ফিরিয়ে আনাসহ জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলটি করতে চায় দলটি। সমাবেশ শেষে মিছিলটি পল্টন মোড়, বিজয়নগর ও নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ করার কথা বলা হয় ওই আবেদনে।

 

গত সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা চাইতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কার্যালয়ে গেলে তাদের আটক করা হয়। ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে আটক চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক সাইফুর রহমান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুল বাতেন ও জালাল উদ্দীন ভূইয়া এবং সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রহমান ভূইয়া। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

 

এদিকে, শুক্রবার ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ৫ জুনের বিক্ষোভ কর্মসূচির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে বিষয়টি দেখছি।

 

চলমান এই অবস্থায় জামায়াত আগামীকালের কর্মসূচি পালন করবে কিনা তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে বেশ আগ্রহ রয়েছে। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দলটির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রমনা ও পল্টন থানার কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে ভোরের আকাশ।

 

জানা গেছে, দলটির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সোমবারের বিক্ষোভ মিছিল সফলে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এসব নেতারা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তারা হয়তো শর্তসাপেক্ষে মিছিল করার অনুমতি পেতে পারেন। যদি অনুমতি না মেলে তবুও মিছিল থেকে তারা পিছপা হবেন না বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে দলটির মিছিলের স্থান বা সময়ে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, থানা বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা এ বিষয়ে কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি।

 

এদিকে, শনিবার বিকেলে আগামীকালের সমাবেশ ও মিছিল সফল করতে রাজধানীতে দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছে দলটি। স্থান উল্লেখ না করলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ওই বৈঠকের ভিডিও শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই বৈঠকে দলটির নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ মো: তাহের প্রধান অতিথি ছিলেন।

 

এছাড়া দলটির অন্যতম নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ও শফিকুল ইসলাম মাসুদ অংশ নেন বৈঠকে। ওই বৈঠক থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে কর্মসূচি সফল করতে সব স্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত গ্রহণ করার নির্দেশ দেন ডা. তাহের।

 

এ বিষয়ে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ভোরের আকাশকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল করতে চান তারা। এই সমাবেশের ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য গত সোমবার জামায়াতের পক্ষ থেকে কয়েকজন আইনজীবী ডিএমপির কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে তাদের আটক করা হলেও পরবর্তীতে ছেড়ে দেয় পুলিশ। আমাদেরকে সমাবেশ করতে দেবে না এমন কোনো কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়নি।

 

এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এখনো বলছেন, জামায়াতকে মিছিল করতে অনুমতির সিদ্ধান্ত না নিলেও তিনি বিষয়টি দেখছেন। তাই আমরা ধরে নিতে চাই, প্রশাসন শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে মিছিলের অনুমতি দেবে।

 

আর অনুমতি মিললে জামায়াত কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত কিন্তু এদেশে নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন নয়, তাই সরকার দলটির গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে অনুমতি না দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দিলেও তা শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যাবে না বলে দাবি তার।

 

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের পর মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ইতোমধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নয় নেতার বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করা হয়েছে। ২০১৩ সালের আগস্টে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে রায় প্রদান করেন। এরপর থেকে জামায়াত তাদের নিজস্ব প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ মার্কা নিয়ে ভোট করার ক্ষমতাও হারিয়েছে।

 

নেতাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানো ইস্যুতে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের অভিযোগ ছিল দলটির বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জামায়াত নিজেদের মাঠের রাজনীতি থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নেয়। এরপর জামায়াতের তৃণমূল ব্যস্ত ‘দাওয়াতি’ ও সামাজিক কর্মকান্ডে।

 

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজিত হওয়ার পর আরো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে জামায়াত। পরে দলটি বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ লোকবল সৃষ্টির মিশনে মাঠে নামে। গত বছরের ২৭ আগস্ট জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন।

 

এছাড়া ৯ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের এক সভায় রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কার্যত ভেঙে দেয়া হয়।

 

 

গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের জনসভায় বিএনপি ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করলে ওই দিনই জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। প্রথমদিকে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে মাঠে ছিল জামায়াত। যুগপৎ কর্মসূচির প্রথমেই ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল পালনকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

 

এরপর দলটিকে আর প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে দেখা যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version