-->

বিএনপির ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ গ্রহণ করেনি গণতন্ত্র মঞ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ গ্রহণ করেনি গণতন্ত্র মঞ্চ

যুগপৎ আন্দোলনে ৩১ দফা সংবলিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ তৈরি করেছে বিএনপি। কিন্তু তাদের এই যৌথ ঘোষণাপত্র গ্রহণ করেনি গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করার জন্য বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছিল। সেই কমিটি ৭ দফা সংবলিত একটি খসড়া তৈরি করে, সেটি নিয়ে প্রথমে বিএনপি আপত্তি জানায়।

 

পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ৩৫ দফা সংবলিত একটি যৌথ ঘোষণাপত্রের রূপরেখা দেয়া হয়। কিন্তু বিএনপি সেটার অনেক বাদ দিয়ে তাদের মতো করে ৩১ দফার একটি যৌথ ঘোষণাপত্র গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়। মঞ্চের পক্ষ থেকে তাদের এই ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়নি।

 

কোন কোন জায়গায় মঞ্চের আপত্তি আছে এবং আর কোন বিষয়গুলো সংযুক্ত করতে হবে, সেটি তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আগামী ১০-১২ তারিখের মধ্যে আবারো আলোচনা হবে বিএনপির সঙ্গে। আমরা আশা করি, বিএনপি সবার অবস্থানের প্রতি সম্মান রেখে সবার মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। এটা নিয়ে আমাদের কিছু পরামর্শ রয়েছে। সেটা বিএনপিকে জানিয়েছি। যৌথ ঘোষণা নিয়ে তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বসা হয়েছে। আবারো বসতে হবে।

 

কবে নাগাদ বিরোধী দলগুলোর এই যৌথ ঘোষণাপত্র ঘোষণা হতে পারে জানতে চাইলে মান্না বলেন, এটা এখনই বলতে পারছি না। মঞ্চের পক্ষ থেকে যৌথ ঘোষণাপত্রের জন্য ৭ এবং ৩৫ দফা দেয়া হয়েছিল, বিএনপির ৩১ দফায় তার অনেক কিছু নেই, শেষ পর্যন্ত কী ঘোষণাপত্র হবে জানতে চাইলে মান্না বলেন, আন্দোলনের নিজস্ব একটা দাবি আছে। সেটার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যৌথ ঘোষণাপত্র করার চেষ্টা করব। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।

 

বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঘোষণাপত্র তৈরি কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তাদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তাদের কোন জায়গায় আপত্তি সেটা তারাই বলতে পারবে।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের দাবি, বিএনপির সঙ্গে কথা ছিল যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হওয়ার আগে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু বিএনপির ৩১ দফার যৌথ ঘোষণাপত্র বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, এটা নিয়ে জোটের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাছাড়া তাদের তৈরি ঘোষণাপত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে পরিষ্কার কোনো বার্তা নেই। আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পরিষ্কার একটা সমাধান চাই।

 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে মঞ্চের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, কথা ছিল যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত না হওয়ার আগে মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। তারা সেটা করেনি। তারা মিডিয়াকে দিয়ে দিয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের কিছুটা অসন্তোষ আছে।

 

তিনি আরো বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) ৩১ দফা গ্রহণ করিনি। কোনো কোনো জায়গায় আমাদের আপত্তি আছে, সেটাও জানিয়ে দিয়েছি।

 

যেহেতু ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত মঞ্চের লংমার্চ আছে, তাদের আগামী ১০ তারিখে পরে আবার বসব। মঞ্চের শরিক দল ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির তৈরি যৌথ ঘোষণাপত্রের ৩১ দফা নিয়ে কথা হয়েছে। এটাই চূড়ান্ত নয়। মঞ্চের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতার দাবি, বিএনপির ৩১ দফার ঘোষণাপত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সংশোধন করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এখানে আমাদের আপত্তি রয়েছে।

 

মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদ সদস্যরা চাইলে সংসদের অর্থবিল ছাড়া সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব বিলসহ সবকিছুতে ভোট দিতে পারবে। শুধু তাই নয়, কোনো সাংসদ মনে করলে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সংসদে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু বিএনপি এটা মানেনি। তাদের কথা এটা নিয়ে একটা কমিশন গঠন হবে। তারাই ঠিক করবে ৭০ অনুচ্ছেদের কী সংশোধন করা হবে।

 

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টা আমরা পরিষ্কার করতে চাই যৌথ ঘোষণাপত্রে। এটাকে ছাড়া বিএনপি কোনো যৌথ ঘোষণাপত্র করতে চাইলে মঞ্চের অন্য শরিকরা মেনে নিলেও আমরা নেব না।

 

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কিছু পরামর্শ ছিল, সেগুলো দিয়েছি। এটা নিয়ে দ্বিমত হওয়ার কিছু নেই। ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা বলেন, এটার বাইরে তেমন কোনো আপত্তি নেই। এটাকে ২৭ দফার মধ্যে রাখলে পারত। তার মধ্যে উপধারা যোগ করতে পারত।

 

নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সাবেক ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে আমাদের আপত্তি না থাকলেও অন্য জায়গায় অবশ্যই আপত্তি আছে। সেটা হলো আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন একসঙ্গে হবে কিনা, সেটা পরিষ্কার করেনি বিএনপি।

 

আমরা বলেছি, আন্দোলনে জয়ী হলে নির্বাচনটা কীভাবে হবে, বিএনপির পক্ষ থেকে সেটা নিয়ে এখনো কিছু বলেনি। পরবর্তী সময়ে সরকার গঠন কীভাবে হবে বিএনপি সেটাও বলেনি। আমরা চাই, এ বিষয়গুলো বিএনপি খোলসা করুক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version