-->
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রার্থী যাচাইয়ের দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন
প্রার্থী যাচাইয়ের দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপ শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদীয় আসনভিত্তিক জরিপসহ ত্রিমুখী তৎপরতা চলছে। একাধিক সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিদেশি একটি সংস্থাও জরিপ করছে। সিআরআই তাদের মতো করে তথ্য সংগ্রহ করছে। চলছে সাংগঠনিকভাবে প্রতিবেদন তৈরির কাজ।

 

এসব ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন করে বাছাই কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে দলটি। তথ্যসমূহ প্রতিবেদন আকারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। আর দ্বিতীয় ধাপ উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন তিনি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ফলে ওই দুটি জাতীয় নির্বাচন তেমন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ছিল না। ওই দুটি নির্বাচনের তুলনায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ ভিন্ন হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ এবং প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। তাই প্রার্থী বাছাই কার্যক্রমও চলছে খুব সূ²ভাবে।

 

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পুুরো রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। তাদের দল গোছানোর কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। দলীয় জেলা-উপজেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন শেষদিকে। সুরাহা হওয়ার শেষ পর্যায়ে তৃণমূল কোন্দলও। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলোচনা ও দেনদরবার।

 

শুধু তাই নয়, যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দলটি। এই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে তিন ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। যার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি হবে বড় চ্যালেঞ্জের। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিক বা না নিক, সার্বিক বিবেচনায় ভোট আগের মতো সহজ হবে না। সে জন্য দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।

 

দলের কর্মসূচিগুলোতেও তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানো হচ্ছে। রাজনৈতিক এসব কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে নির্বাচনী প্রস্তুতি, যার লক্ষ্য দ্বাদশ নির্বাচনের বৈতরণী পেরিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে সংসদীয় ৩০০ আসনে জিতে আসার মতো যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে ত্রিমুখী তৎপরতা চলছে।

 

এতে কোন আসনে দলের কার অবস্থান তুলনামূলক ভালো, সেটি পরখ করে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। অযোগ্যদের বিপরীতে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা হচ্ছে জরিপ ও নানা মানদন্ডে ওপর ভিত্তি করে। এ কাজটি নিজস্ব প্যাটার্নে করছে সরকারি একটি সংস্থা, দেশি-বিদেশি একাধিক বেসরকারি সংস্থা এবং দলের দায়িত্বশীল নেতারা। যোগ্য প্রার্থী খোঁজার এই প্রক্রিয়াটি মাঝ পর্যায়ে রয়েছে, যার বাকি কাজ শিগগিরই সমাপ্ত হবে।

 

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রসমূহ জানায়, সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জরিপের ফল ও প্রতিবেদন আসার পর সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও তুলনামূলক কম যোগ্যসহ ক্যাটাগরিক্যাল একাধিক প্রার্থী তালিকাও হতে পারে। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের বিতর্কিত ও অযোগ্য এমপিদের আলাদা তালিকা থাকছে।

 

এগুলো বিবেচনায় নিয়ে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভাপতি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলে নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নের আবেদনপত্র বিক্রি এবং জমা নেয়া হবে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে বাছাই করা যোগ্য প্রার্থীদের মনোনীত করবেন।

 

গত ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায়ও এ বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণ যাদের চায়, তাদের পাশে থাকা প্রার্থীকেই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকা বা ক্ষমতাধর মনে করা কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। বিষয়টি পরিষ্কার করেই বলছি, যাদের আমলনামা ভালো তারা মনোনয়ন পাবেন, যাদের আমলনামা খারাপ তারা বাদ পড়বেন।

 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচন অত সহজ হবে না। দল গোছাতে হবে।

 

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সংসদ সদস্যদের বলেছেন গণসংযোগ করতে, ঘরে ঘরে যেতে এবং যার যার এলাকায় দল গোছাতে, অন্তর্কলহ বন্ধ করতে এবং তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন অত সহজ হবে না। প্রত্যেককে তার নির্বাচনী এলাকায় দলের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত সব পরিকল্পনা বিএনপি নির্বাচনে এলে কী হবে এবং না এলে কী হবে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

 

বিএনপি জোট ও এর সমমনাদের দাবি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আগেই এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। এর বাইরে গিয়ে বিএনপিকে এনে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার কোনো ইঙ্গিত বা আলাপ আওয়ামী লীগের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি।

 

তাই নির্বাচনী বাস্তবতার সার্বিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করেও দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ধরন পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version