-->

এবার ইউনিয়ন পর্যায়ে আ.লীগ-বিএনপির লড়াই

নিখিল মানখিন
এবার ইউনিয়ন পর্যায়ে আ.লীগ-বিএনপির লড়াই

নিখিল মানখিন: দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। এবার দু’দলের বাগযুদ্ধ ও বিভাগীয় রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। একই দিনে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রার বিপরীতে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক র সংঘাতের শঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল।

 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিক মাঠ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হতে পারে পবিত্র রমজান। এর আগে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বিএনপি হাইকমান্ড। গত বছর দেশব্যাপী গণসমাবেশ, গণমিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি।

 

নতুন বছরেও আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে দলটি। তারা প্রায় প্রতিদিনই নানা কৌশলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এতদিন বিভাগীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে আসছিল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করবে দলটি।

 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। ওই দিন তিনি বলেন, আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

 

ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমরা পদযাত্রা শুরু করব। এরপরে ধীরে ধীরে আমরা উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং এরপর তাদের যে ক্ষমতার মসনদ, সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে।

 

এদিকে, শনিবার ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে আগামী ১১ ফেব্রæয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

 

১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে আ.লীগের শান্তি সমাবেশ : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে মাঠে ব্যস্ত রেখে নির্বাচনী বছর পার করতে চায় দলটি। সংঘাত এড়ানোর সব ধরনের চেষ্টা করার পাশাপাশি বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলও নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

 

সরকার পতনের দাবিতে গত বছর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এর মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেদিন কর্মসূচি থেকে বিএনপি নৈরাজ্য করতে পারে দাবি করে রাজধানীর অলিগলিতে সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর বিএনপি ঢাকায় যেদিন কর্মসূচি দিয়েছিল, তার পাল্টা শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীনরা।

 

এর মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগও বিভাগীয় পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করে। ওই দিন কামরাঙ্গীরচরে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে বিএনপির পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি ক্ষমতাসীনরা দিচ্ছে না বলে দাবি করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবেন বলেও জানান তিনি।

 

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথ না ছাড়ার আহব্বান জানিয়ে আসছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি একটি সমাবেশে তিনি বলেন, বিএনপি কখনোই গণতন্ত্রের পথে চলে না। তাদের অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য খালি মাঠ দেয়া হবে না। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। বিএনপির সাম্প্রদায়িক কায়দা, জঙ্গিবাদী কায়দা ও বিশৃঙ্খলতার কঠিন জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক।

 

এদিকে, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। গত রোববার রাতে দলের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করা হবে। ১১ ফেব্রুয়ারির এ সমাবেশ সফল করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০টি জেলার কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

 

রোববার আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।

 

সভা সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে প্রতিটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে একযোগে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ শান্তি সমাবেশ সফল করতে ৪০টি জেলার কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের যেসব জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

জয়পুরহাটে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, লালমনিরহাটে অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি, রংপুরে এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি, সুজিত রায় নন্দী ও অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, বগুড়ায় ডা. রোকেয়া সুলতানা, নওগাঁয় সাখাওয়াত হোসেন শফিক, রাজশাহী জেলায় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বেগম আখতার জাহান, সিরাজগঞ্জে প্রফেসর মেরিনা জাহান এমপি, পাবনায় নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, মাগুরায় শ্রী নির্মল কুমার চ্যাটার্জী,

 

নড়াইল মাশরাফী বিন মর্তুজা এমপি, বাগেরহাট অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল ইসলাম মিলন এমপি, ঝিনাইদহে পারভীন জামান কল্পনা, যশোরে বি এম মোজাম্মেল হক, খুলনা জেলায় এস এম কামাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট গেন্ডারিয়া সরকার ঝর্ণা, বরগুনায় সিদ্দিকুর রহমান, পটুয়াখালীতে অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, বরিশাল জেলায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও আনিসুর রহমান, পিরোজপুরে মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু,

 

টাঙ্গাইলে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও বেগম শামসুন নাহার, মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মুন্সীগঞ্জে অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, গাজীপুরে সিমিন হোসেন রিমি এমপি, নরসিংদীতে অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, রাজবাড়ীতে দেলোয়ার হোসেন, ফরিদপুরে আব্দুর রহমান, গোপালগঞ্জে লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান ও সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, মাদারীপুরে শাহজাহান খান,

 

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আনোয়ার হোসেন ও সাহাবুদ্দিন ফরাজী, শরীয়তপুরে ইকবাল হোসেন অপু, জামালপুরে মির্জা আজম, শেরপুরে মারুফা আক্তার পপি, নেত্রকোনোয় অসীম কুমার উকিল ও উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, লক্ষীপুরের ফরিদুন্নাহার লাইলী, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কুমিল্লা উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুম সবুর, চাঁদপুরে ডা. দীপু মনি ও ড. সেলিম মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তরে ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণে আমিনুল ইসলাম, রাঙ্গামাটিতে দীপঙ্কর তালুকদার ও বান্দরবানে ওয়াসিকা আয়শা খান, কক্সবাজারে অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা প্রমুখ।

 

আর যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না, সেখানে জেলার নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউপি পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করতে বলা হয়েছে।

 

সোমবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের শান্তিময় পরিবেশ বিনষ্ট করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছে। এতে বাধা দিচ্ছে না সরকার। আর আওয়ামী লীগও প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রæয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে দলটি। বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নয়, দেশের মানুষকে শান্তির বার্তা দিতে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশে অরাজকতা সৃষ্টিতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নয়, আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দেশের মানুষ কী অবস্থায় ছিল, সেগুলো তুলে ধরা হবে।

 

দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে, জনগণকে সে আহব্বান জানানো হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের শান্তি সমাবেশ হবে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পক্ষে, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version