-->

রাজনৈতিক সংঘাতে যাবে না আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন
রাজনৈতিক সংঘাতে যাবে না আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: রাজনৈতিক সংঘাতে যাবে না আওয়ামী লীগ। তবে মাঠে অবস্থান করে বিএনপিকে চাপে রেখে নির্বাচনী বছর পার করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল।

 

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বছর শুরু করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। জানুয়ারিজুড়ে চলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন এবং বাগযুদ্ধ। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচির দিন নানা কৌশলে মাঠে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। ফলে বেড়ে যায় রাজনৈতিক উত্তেজনা।

 

রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা নিয়ে চলছে জাতীয় নির্বাচনী বছর ২০২৩। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের অবস্থান আবার পাকাপোক্ত করতে এবং বিএনপি ১৫ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ২০২২ সালের শেষদিকে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তাপ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। চলতি বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম থাকবে সেটিকে কেন্দ্র করেই।

 

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম সময়। গত বছর দেশব্যাপী গণসমাবেশ, গণমিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি। নতুন বছরেও আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে দলটি। প্রতিদিন তারা পালন করছে একের পর এক কর্মসূচি।

 

নতুন বছরে সেই উত্তাপের তীব্রতা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ২০২২ সালের শেষদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো হয়ে ওঠে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

তারা বলছেন, রাজনীতিকে আন্দোলনের মাঠ থেকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার কৌশল গ্রহণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিকে আন্দোলনে ব্যস্ত রেখে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কৌশল বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

 

গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচিতে কোনো সংঘাতের উসকানি না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

তবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এখন তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে মাঠে থাকতে হবে। কোনো দলকে খালি মাঠ দেব না বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

 

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দলীয় জেলা-উপজেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন শেষদিকে। সুরাহা হয়েছে তৃণমূল কোন্দলও। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলোচনা ও দেনদরবার। জোরালো করা হয়েছে ক‚টনৈতিক যোগাযোগ। গত কয়েক মাসে দলীয় জেলা ও উপজেলা সম্মেলন আয়োজন করে বিশাল বিশাল জনসমাবেশ ঘটিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে দলটি এখন নির্বাচনমুখী। দল গোছানোর পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।

 

এভাবেই নীরব ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় অবস্থান এবং নির্বাচন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার বিষয়ে বার্তা দিতেই এ ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। শুধু দলীয় ব্যক্তিদের দিয়েই নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে হাইকমান্ড। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় রেখেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে তেমন পরিবর্তন আনেনি আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগের নির্ভরশীল সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মাঠে সক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৪ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে যেকোনো ধরনের নাশকতা রুখে দিতে হবে। এর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। এখনই দলকে নিয়ে সর্বাত্মক নির্বাচনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সারা দেশের মানুষকেও নির্বাচনমুখী করতে হবে। মাঠ ছেড়ে দেয়া যাবে না।

 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছর আমরা মাঠপর্যায়ের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াব। নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় করে পরস্পরের ভেতরে ঐক্যবদ্ধ ও সম্প্রতির বন্ধন তৈরি করব। দলীয় কর্মসূচিতে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো তুলে ধরব।

 

পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে আমাদের গায়ে যে তকমা ছিল, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির অপব্যবহার এসব থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত। আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করাই আমাদের লক্ষ্য। এ বিষয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ে আমাদের বিশেষ মনোনিবেশ থাকবে বলে জানান আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, নতুন বছরে দ্বাদশ জয়ে ভোটের মাঠের কাজ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় সমাবেশ-জনসভা করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ভোট প্রার্থনায় মাঠে নেমেছেন।

 

৪ ফেব্রুয়ারি জনসভায় সশরীরে যোগ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিদায়ী ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। তিন মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। উন্নয়নের উচ্ছাসে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ছুটবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version