-->

গাইবান্ধা উপনির্বাচন: পুনঃভোট, না তফসিল

শাহীন রহমান
গাইবান্ধা উপনির্বাচন: পুনঃভোট, না তফসিল

শাহীন রহমান: অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করে নির্বচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ঘটনার দেড় মাস পার হচ্ছে। এ নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। ফলে সেখানে পুনঃভোট হবে, না নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হবেÑ বিষয়টি নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটাররাও অন্ধকারে রয়েছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন করে ভোট করতে হলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ফলে প্রার্থীদের পুনরায় মনোনযন দাখিল করতে হবে। আর যদি পুনঃভোট গ্রহণ করা হয়, সেক্ষেত্রে বৈধ প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশ নেবে। নতুন করে কোনো প্রার্থী ভোটে অংশ নিতে পারবে না। আগের প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে শুধু ভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে গঠিত দুটি কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে নির্বাচনের বিষয়ে ইসি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। অনিয়মে জড়িতদের বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি ইসি। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। নির্বাচনী অনিয়মের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। গাইবান্ধায় নতুন করে ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন কিচ্ছু বলব না। ওয়েট করেন, জানতে পারবেন।

 

গত ১২ অক্টোবর ৫১টি কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে উপনির্বাচনের মাঝপথে ভোট বন্ধের ঘোষণা দেন সিইসি। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণাও দেন তিনি। সেই কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ইসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু ৫১ কেন্দ্রে নয়, নির্বাচনের অধিকাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। গত ১৫ নভেম্বর ইসিতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল ভোট বন্ধ হওয়া ৫১টি কেন্দ্র নয়, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের বাকি ভোটকেন্দ্রের প্রায় সবগুলোর চিত্রও একই ধরনের। এসব কেন্দ্রে অনাকাক্সিক্ষত জনগণের প্রবেশ, ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধ্য করা বা প্রভাবিত করা, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষের ছবি ধারণসহ নানা অনিয়মের তথ্য পেয়েছে। ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি বাকি ৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭টির সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব অনিয়ম পেয়েছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

 

এর আগে তদন্ত কমিটি ভোট বন্ধ হওয়া ৫১টি কেন্দ্রের সিটিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, প্রার্থীসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে গত ২৭ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানান, গাইবান্ধার উপনির্বাচনে স্থগিত ৫১টি কেন্দ্র বাদে বাকি ৯৪টি কেন্দ্র, যেগুলোতে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করেনি, সেই কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একটি কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এর ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি ওই কেন্দ্রগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দিয়েছে।

 

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রথমে ৫১টি ভোটকেন্দ্র এবং একপর্যায়ে পুরো ভোটগ্রহণ মাঝপথে বন্ধ করে দেয় ইসি। ভোট চলাকালে ঢাকায় বসে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এসব ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে (বুথ) ভোটার ছাড়া অবৈধভাবে অন্য ব্যক্তিদের অবস্থান করতে দেখা গিয়েছিল। একটি সংসদীয় আসনের পুরো ভোট বন্ধের ইতিহাস অতীতে দেখা যায়নি। পরে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

 

গত ২৩ জুলাই এ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। এর পরেই উপিনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১২ অক্টোবরের এ আসনের উপনির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন। এ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন।

 

উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পরই এ আসনের ভোটের জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত জানায় ইসি। সংবিধান অনুযায়ী কোনো আসন শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২৩ জুলাই ফজলে রাব্বির মৃত্যুর পর শূন্য ঘোষিত এ আসনে ২০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ১২ অক্টোবর ভোট বন্ধ ঘোষণার ৮ দিন পরই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে পুনরায় ভোট করতে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে উপনির্বাচন আয়োজনের জন্য দৈবদুর্বিপাক দেখিয়ে অতিরিক্ত ৯০ দিন সময় নেয় ইসি। এ সময় শেষে হবে ২০ জানুয়ারি। এই সময়ের অর্ধেক পেরিয়ে গেলে এ আসনের উপনির্বাচনের জন্য ইসি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ফলে এ আসনে পুনঃভোট হবে, না পুনরায় ভোটের জন্য তফসিল ঘোষণা হবে- সে বিষয়ে ভোটার ও প্রার্থীরা এখনো অন্ধকারে রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version