-->

ডিসেম্বরের ৯ দিন ছাত্রলীগের দখলে থাকবে রাজধানী

নিখিল মানখিন
ডিসেম্বরের ৯ দিন ছাত্রলীগের দখলে থাকবে রাজধানী

নিখিল মানখিন: ডিসেম্বরের প্রথম ৯ দিন ছাত্রলীগের দখলে থাকবে রাজধানী ঢাকা। ফলে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ মোকাবিলায় প্রথম প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে ছাত্রলীগকেই ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ। সেভাবেই সাজানো হয়েছে ছাত্রলীগের সম্মেলন।

 

আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সম্মেলন ২ ডিসেম্বর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন হবে ৩ ডিসেম্বর। ফলে ১ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা এবং তাদের সমর্থকদের পদচারণায় মুখর থাকবে রাজধানী। এ সুযোগেই নগরীর পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

গত সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন ও প্রস্তুতি জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর।

 

আগামী ২ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মিলিতভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন এবং ৩ ডিসেম্বর অপরাজেয় বাংলার সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ৮ ও ৯ ডিসেম্বর হলেও রাজধানীসহ সারাদেশে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহজুড়ে এর আবহ বিরাজ করবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে উত্তর ঢাকা মহানগর ও দক্ষিণ ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় তার আবহ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে শোডাউনের তীব্রতা আরো বাড়বে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের পরিবেশ জটিল করে তুলতে কৌশলী কর্মসূচি সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ৩ ডিসেম্বর।

 

সেই তারিখ পরিবর্তন করে বিএনপির গণসমাবেশের ঠিক আগে ৮ ও ৯ ডিসেম্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর আগমন ঘটবে রাজধানীতে। সৃষ্টি হবে জনসমুদ্র। সম্মেলনের অজুহাতে নগরীর রাস্তাঘাট, অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে রাজধানীতে আরেকটি বড় ধরনের সম্মিলনের আয়োজন করে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সেটি হলো উত্তর ঢাকা মহানগর ও দক্ষিণ ঢাকা মহানগরের সম্মেলন।

 

এ সময়েও দুই দিন ধরে রাজধানীর অলিগলি ছাত্রলীগের দখলে থাকবে। মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ইউনিটগুলোর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকবে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ যেন ছাত্রলীগ দিয়েই প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নগরীতে গড়ে তোলা হবে বিএনপির গণসম্মেলন মোকাবিলার বলয়।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনা লড়াইয়ে রাজনীতির মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। এ জন্য তাদের (বিএনপি) একপ্রকার প্রস্তুতিও চোখে পড়ার মতো অবস্থায় আছে। আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের একটানা শাসনামলেও নিজ দল ছাড়েননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সংগ্রাম করে তারা দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে যাচ্ছেন।

 

দলীয় কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ বেশ দৃশ্যমান। নানা বাধা উপেক্ষা করে স¤প্রতি বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে জনসমাগম বিএনপি নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তারা দলের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।

 

দলের শীর্ষ নেতারাও আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার উদ্যম ও সাহস ফিরে পাচ্ছেন। এ থেকেই রাজনীতির ময়দান দখলে নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন তারা। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে পাল্টা জবাব দিতেও পিছপা হচ্ছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

এ দিকে, ভিন্ন কৌশলে জনসমাবেশ ঘটিয়ে রাজপথ দখলে রেখে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা জবাব দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিÑ দুটিই একসঙ্গে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন দিবসভিত্তিক ও দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকবে তারা।

 

আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রাজপথে অবস্থান ধরে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত হয়েছে।

 

ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সামনে রেখে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণও তারই অংশ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

সম্প্রতি দলীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমরা আপনাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু সমাবেশের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে।

 

একই সঙ্গে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। আপনাদের সঙ্গে খেলা হবে, মোকাবিলা হবে, ফাইনাল খেলা হবে ডিসেম্বরে, রাজপথে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version