-->
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)

ভিন্ন নামে নিবন্ধন পাওয়ার জামায়াতের চেষ্টায় সতর্ক ইসি

শাহীন রহমান
ভিন্ন নামে নিবন্ধন পাওয়ার জামায়াতের চেষ্টায় সতর্ক ইসি

শাহীন রহমান: রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা শুরু হয় ২০০৮ সাল থেকে। ওই বছর ইসি ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেয়। এর মধ্যে একটি ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ওই বছরের ৪ নভেম্বর নিবন্ধন পায় দলটি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পরই নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে। তবে সম্প্রতি দলটিকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ভিন্ন নামে নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন দিয়েছে তারা। তবে এই দলের নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইসি।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ৯৮টি দল ইসিতে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু নাম দ্বৈততার কারণে পাঁচটি বাদ দিয়ে ৯৩টি আবেদন এখন বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি দল হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দেয়ার পর থেকে দলটি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতারাই ভিন্ন নামে বিডিপি পার্টি নামে দল গঠন করেছেন। ইসিতে নিবন্ধন আবেদনের পর থেকেই দলটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

 

নতুন এই দলের সভাপতি হচ্ছেন জামায়াতের ডেমরা থানার আমির আনোয়ারুল ইসলাম। আর সাধারণ সম্পাদক হলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক বিদেশবিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে জামায়াত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য নিজামুল হক (নাঈম)। গত ২৬ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দলটির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চাঁনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে আবেদনপত্র জমা দেয়। আবেদনে তারা দলীয় নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে চেয়েছে আনারস। আবেদন জমা দেয়ার সময় আনোয়ারুল প্রথমে দাবি করেন, তিনি বিডিপির কেউ নন। ব্যক্তিগত কাজে এসেছেন। আধা ঘণ্টা পর দেখা যায় তিনিই দলটির সভাপতি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিডিপির নিবন্ধনের জন্য যতগুলো শর্ত আছে, সবকিছু পূরণ করেই আবেদন জমা দিতে এসেছি। আশা করি আমরা ইসিতে নিবন্ধিত হবো এবং আমরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হবো।’

 

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নতুন নামে নিবন্ধন চাইলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আইনে কোনো নির্দেশনা থাকলে পাঁচ কমিশনার বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে জামায়াত-সংশ্লিষ্টদের কোনো দলকে নিবন্ধন না দেয়ার দাবি জানায়। রাশেদা সুলতানা বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ দল আদালতের আদেশ অনুযায়ী। নিষিদ্ধ মানে নিবন্ধনটা বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু নিবন্ধন নেই, নির্বাচনে তারা আসতে পারবে না।

 

এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ইসির ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, আদালত দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধান অনুসারে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়ছে। যেহেতু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ওই আদেশের অনুচ্ছেদ ৯০ এইচ-এর শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল, যেহেতু মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের নং ৬৩০ (২০০৯) রায়ে মহামান্য আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন, সেহেতু মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের রায়ে মহামান্য আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অনুচ্ছেদ ৯০ এইচের সাব ক্লজ (৪) অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (নিবন্ধন নং ০১৪; তারিখ ৪.১১.২০০৮) নিবন্ধন বাতিল করা হলো।

 

এর আগে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠিতে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই সময়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার উক্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ প্রদান না করা এবং যদি বরাদ্দ প্রদান করা হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত বরাদ্দ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যরবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

 

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আগেই তাদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার বন্ধ করে দেয় ইসি। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর ওই প্রতীকেই দলটিকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াত নিজ নামে এবং নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। এর পরই ২০১৩ সালে হাইকোর্ট তাদের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের নেতারা ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপির নির্বাচনী প্রতীকে অংশ নেয়। এখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিবন্ধন পেতে ভিন্ন নামে দল গঠন করে ইসিতে আবেদন জানিয়েছেন। তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’সহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন না দেয়ার দাবি করেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এ দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন তারা।

 

জামায়াত-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ দল গঠন করেছে তারা। এ জন্য অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করেছে। এখন তারা ইসির নিবন্ধন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ইসি এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও এই দলটির নিবন্ধনের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version