-->

পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠে

নিখিল মানখিন
পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠে

নিখিল মানখিন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ দখলে রাখতে মরিয়া সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশ-বক্তৃতা-বিবৃতিতে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। আবার উভয় দলই রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। মাঠ দখলে রাখতে সম্মেলন-কাউন্সিল ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি দলীয় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

 

এরই মধ্যে এসব কর্মসূচির তারিখও ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি তাদের চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশের হিসাব কষে পরবর্তী কর্মসূচি নেবে বলে জানা গেছে। মাঠ দখলে নিতে মরণকামড় দেবে তারা।

 

প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের এই মাঠ দখলের প্রতিযোগিতায় দেশে সংঘর্ষ, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। এরই মধ্যে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাগ্যুদ্ধ রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। পথেপ্রান্তরে দুই দলের শক্তি প্রদর্শনও শুরু হয়েছে।

 

স¤প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরই বিদেশে পালানোর ইতিহাস রয়েছে। প্রধান দুই দলের নেতাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য অব্যাহত থাকলে রাজনীতি এবং নির্বাচনের পরিবেশকে উত্তপ্ত বা অস্থিতিশীল করবে বলেই আশঙ্কা। অবশ্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, তাদের বক্তব্যগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

 

মরণকামড় দেবে বিএনপি : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনা লড়াইয়ে রাজনীতির মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। এ জন্য তাদের (বিএনপি) একপ্রকার প্রস্তুতিও চোখে পড়ার মতো অবস্থায় আছে। আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের একটানা শাসনামলেও নিজ দল ছাড়েননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সংগ্রাম করে তারা দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে যাচ্ছেন।

 

দলীয় কর্মসূচীতে তাদের অংশগ্রহণ বেশ দৃশ্যমান। নানা বাধা উপেক্ষা করে সম্প্রতি বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে জনসমাগম বিএনপি নেতাকর্মীদের আত্মবিশ^াস ও সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তারা দলের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। দলের শীর্ষ নেতারাও আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার উদ্যম ও সাহস ফিরে পাচ্ছেন। এ থেকেই রাজনীতির ময়দান দখলে নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন তারা। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে পাল্টা জবাব দিতেও পিছপা হচ্ছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

কয়েক দিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে গণসমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেশবাসীর নজর কেড়েছে। সব মিলিয়ে তাদের চোখেমুখে ভেসে উঠেছে দৃঢ় প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতেও বড় ধরনের সমাবেশের ঘোষণা আছে বিএনপির।

 

সম্প্রতি সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্নে সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মামলা-হামলা গুমের মাধ্যমে দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যাতে কেউ সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে না পারে। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলন করছে। নানা প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমেছেন।

 

এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এবার রাজপথেই হবে ফয়সালা। আর মাঠে থেকেই মোকাবিলা করা হবে যে কোনো পরিস্থিতি।

 

বিএনপির অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ : ভিন্ন কৌশলে জনসমাবেশ ঘটিয়ে রাজপথ দখলে রেখে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা জবাব দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি-দুটিই একসঙ্গে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় ছয়-সাতটি বড় সমাবেশ করবে দলটি।

 

বিভিন্ন দিবসভিত্তিক ও দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকবে তারা। আর আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রাজপথে অবস্থান ধরে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

 

গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের মাঝখানে বিরতির সময় গণভবনের গেটে এসে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর দলের ২২তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এ ছাড়া ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বড় সমাবেশ করা হবে। ওই সমাবেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

 

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে বলেছেন, আগামী কয়েক মাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সরকারি এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তিনি দলীয় সমাবেশ করবেন। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ হবে। এরপর কক্সবাজার, যশোরসহ অন্যান্য শহরেও সমাবেশ হবে। চলতি মাসে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে পাঁচ-ছয়টি জাতীয় সম্মেলন করা হবে।

 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হতে পারে ডিসেম্বরের শুরুতে। এগুলোতে বড় জমায়েত হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা এবার বড় আকারে করার পরিকল্পনা আছে। গত ১১ নভেম্বর যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যুব মহাসমাবেশের জনসমুদ্র দেখে মহাখুশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মহাসম্মেলনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিএনপিকে মোকাবিলায় ১২ নভেম্বর থেকে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

সম্প্রতি কুমিল্লায় দলীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমরা আপনাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু সমাবেশের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। আপনাদের সঙ্গে খেলা হবে, মোকাবিলা হবে, ফাইনাল খেলা হবে ডিসেম্বরে, রাজপথে।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version