-->

মহামহিমান্বিত রমজানুল মোবারক

নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামহিমান্বিত রমজানুল মোবারক

চলছে মহামহিমান্বিত রমজানুল মোবারক। ‘হে আল্লাহ! এই দিনে আমাকে আপনার বন্ধুদের বন্ধু এবং আপনার শত্রুদের শত্রু করে দিন। আপনার আখেরি নবীর সুন্নত ও পথ অনুযায়ী চলার তাওফিক আমাকে দান করুন।’ পবিত্র ও মহিমান্বিত রমজানুল মোবারক শুধু পানাহার থেকে মুক্ত থাকার মাস নয়।

 

নয় শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেয়ার কোনো উৎসব। বরং পুরো রমজানের রয়েছে ঐতিহাসিক এক মূল্যায়ন। পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা ঘটেছে এ পবিত্র ও মহিমান্বিত মাস রমজানে। তাই রোজা ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি রমজানের রয়েছে ভিন্ন রকমের তাৎপর্য।

 

রমজানের শেষ দশকে রয়েছে পবিত্রতম এক রাত, যা হাজার রাতের চেয়েও কল্যাণময় ও শ্রেষ্ঠ। যে রাতে মানবতার মুক্তির দিশারি, প্রভ‚ত সফলতা ও জান্নাতের চাবিকাঠি সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কোরআনকে প্রথম আসমান থেকে পৃথিবীর বুকে নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ কথা নিজেই জানিয়েছেন। আল্লাহ এরশাদ করেন, রমজান এমন এক মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে; মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে।

 

৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক এক যুদ্ধ, যাতে মুসলমানদের সর্বসাকুল্যে সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। তাও তারা ছিলেন নিরস্ত্র। গাছের ডালপালা ছাড়া তাদের কোনো হাতিয়ার ছিল না। ছিল না কোনো লৌহবর্ম বা শিরস্ত্রাণ। তবুও কুফরি শক্তিকে মুসলমানরা পরাজিত করেছিল।

 

মূলত ওই যুদ্ধে ৩ থেকে ৫ হাজার আসমানি ফেরেশতা প্রেরণ করে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সরাসরি সাহায্য করেছিলেন। আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফির নিহত হয় বদর যুদ্ধে। আরো ৭০ জন কাফির মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলিম মুজাহিদ বীরবিক্রমে লড়াই করে শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন।

 

অষ্টম হিজরির ২০ বা ২১ রমজান শুক্রবার মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কা বিজয় করেন। তখন কাবাঘর মুশরিকদের ৩৬০টি মূর্তি দিয়ে ভরা ছিল। মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার ঘর থেকে সেগুলো অপসারণ করে। নবীজি (সা.) অষ্টম হিজরির ২৫ রমজান হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন নাখলা নামক জায়গার একটি বৃহদাকার মূর্তি অপসারণের জন্য, কাফিররা এর পূজা করত, যার নাম ছিল উজ্জা।

 

হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নিজ হাতে ওই মূর্তি অপসারণ করেন। এরপর তিনি বলেন, আর কখনো এখানে উজ্জার উপাসনা হবে না। এছাড়া হিজরতের দুই বছর আগে রমজান মাসে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (রা.) এবং নবীজি (সা.)-এর মেয়ে হজরত রুকাইয়া (রা.) ইন্তেকাল করেন।

 

হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তৃতীয় হিজরির রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেন এবং চতুর্থ হিজরিতে নবীজি (সা.) হজরত জয়নব বিনতে খুজাইমা (রা.)কে বিয়ে করেন। ১১ হিজরির রমজানে নবীজি (সা.)-এর সবচেয়ে আদরের মেয়ে, জান্নাতি নারীদের সরদারিণী হজরত ফাতেমা (রা.) এবং ৪০ হিজরিতে শেরে খোদা হজরত আলী (রা.) ইন্তেকাল করেন।

 

আল্লাহ আমাদের রমজানের শিক্ষা, ঐতিহাসিক মূল্যায়ন ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলা অন্তরে ধারণ করে সে আলোকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version