-->

নাজাতের দশক শুরু, খুঁজতে হবে কদরের রাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নাজাতের দশক শুরু, খুঁজতে হবে কদরের রাত

২১তম রমজানের দোয়া হে আল্লাহ! এ দিনে আমাদের তোমার সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত কর। শয়তানদের আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে দিও না। জান্নাতকে আমাদের গন্তব্যে পরিণত কর হে প্রার্থনাকারীদের অভাব মোচনকারী।

 

আজ ২১ রমজান। নাজাতের শুরুর দিন শুরু হলো। রমজানের শেষ ১০ দিনকে বলা হয় নাজাতের দশক। রমজান মাসের এই শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আছে বেশকিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হলো-

 

১. এই ১০ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত, যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। রমজাজের শেষ দশকের প্রতি বিজোড় রাতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) কদরের রাত খোঁজার নির্দেশনা রয়েছে।

 

২. নবী করিম (সা.) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোনো রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সাহরি গ্রহণ করতেন।

 

৩. রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুল (সা.) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন। যেমন বুখারি ও মুসলিমে আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে; তিনি এই ১০ দিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সবাইকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। রাসুল (সা.) লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন কথাটির অর্থ হলো তিনি এ দিনগুলোয় স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

 

৪. এই ১০ দিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, রাসুল (সা.) এই শেষ ১০ দিনে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না।

 

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সব রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তার কালাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসুল প্রেরণকারী।

 

তোমার রবের কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। যিনি আসমানসমূহ ও জমিন এ দুইয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব; যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনিই জীবনদান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের রব।’ (দুখান : ৩-৮)। বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন।

 

কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত, তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হলো এ রাতে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।

 

সূরা কদর থেকে যে বিষয়গুলো জানা যায়-

 

১. এ রাত এমন এক রজনী; যাতে মানবজাতির হিদায়াতের আলোকবর্তিকা মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

 

২. এ রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।

 

৩. এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকেন।

 

৪. এ রজনী শান্তির রজনী। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।

 

৫. সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। এ আয়াতগুলোয় অল্পসময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হলো। যত সময় বেশি, তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।

 

৬. গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ।

 

এ রাতের এ ফজিলত সম্পর্কে বুখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version