-->

জুমাতুল বিদা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুমাতুল বিদা আজ
প্রতীকী ছবি

জুমাতুল বিদা আজ। পবিত্র রমজান মাসের শেষ জুমাবার। এই দিনটি আবার সারা মুসলিম জাহানে আল কুদস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জুমা আরবি শব্দটির বাংলা অর্থ শুক্রবার আর ‘বিদা’ অর্থ শেষ। জুমাতুল বিদা অর্থ শেষ শুক্রবার। মাহে রমজানের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। যদিও কোরআন বা হাদিসে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জুমাতুল বিদা বিষয়ে কোনো বর্ণনা নেই। তারপরও ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন রমজানের শেষ জুমার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুমা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলেছে সীমাহীন মহিমাময়।

ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে ‘আল-কুদস দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। রমজান মাসের জুমাবার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময়। জুমাতুল বিদাসহ মাহে রমজানের প্রত্যেক জুমাবারে ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক সওয়াব লাভের সুযোগ থাকে।

সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর শেষ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে মাহে রমজানকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা আল-জুমা, আয়াত-৯)

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, রমজান মাসের সর্বোত্তম বা উৎকৃষ্ট দিবস হলো জুমাতুল বিদা। এ দিনটি মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপযপূর্র্ণ যে, এ দিনে আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র হজরত সুলাইমান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে তিনি সেখানে মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদ আল-আকসা পুনর্নির্মাণ করেন। মক্কার মসজিদে হারাম, মদিনার মসজিদের নববীর পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদ আল-আকসা।

প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে বিশ্বের মুসলমানরা ইসরায়েলের কবল থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য নতুন শপথ নিয়ে থাকে। এজন্য রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে আল কুদস দিবস বলা হয়। এ দিন বিশ্বের মুসলমানরা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, তাদের উন্নয়ন, আল কুদসের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ প্রার্থনা করে থাকে।

তারা বলেন, রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা, যা মাহে রমজানে পরিসমাপ্তিসূচক শেষ শুক্রবারে পালিত হয়। এ দিন মুমিন মুসলমানদের ইমানি সম্মিলন হয়। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃত্বস্থানীয় দিন। এ পুণ্য দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এ দিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। এ দিন তিনি পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিন তার ইন্তেকাল হয়। এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ পুণ্য দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময় আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়। (মিশকাত)

তারা বলেন, জুমাতুল বিদা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রোজার শেষ প্রান্তে এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই। যে তিনটি বিষয় জুমাতুল বিদাকে আল্লাহর করুণা, দয়া, ক্ষমা তথা মাগফিরাত ও নাজাত লাভের দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে মাহে রমজান, জুমাতুল বিদা এবং শেষ শুক্রবার ‘আল-কুদস দিবস’।

প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান বায়তুল মোকাদ্দাসে ইহুদিদের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেন এবং ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের কবল থেকে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে মুক্ত করার জন্য নতুন শপথ গ্রহণ করে থাকেন। তাই মাহে রমজানের ‘জুমাতুল বিদা’ তথা শেষ শুক্রবারকে ‘আল-কুদস দিবস’ বলা হয়। রোজার সমাপণীসূচক জুমাতুল বিদার নামাজে মসজিদে বিশেষ মুনাজাতে রোজাদার মুসল্লিরা দেশ-জাতির উন্নয়ন, আল-কুদসের মুক্তি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি, শান্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

মন্তব্য

Beta version