-->

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বর্ষবরণ

শাহীন রহমান
নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বর্ষবরণ

শাহীন রহমান: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে থার্টিফার্স্ট নাইট পালনে আগেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নববর্ষ বরণ করে নিতে রাজধানীবাসীকে নিষেধাজ্ঞা মানতে দেখা যায়নি কোথাও।শনিবার সূর্যাস্ত যাওয়ার পরই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পটকা ফোটনো শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ বাড়তে থাকে।

 

ঘড়ির কাঁটার যখন ১১টা ৫৯ মিনিট চারদিকে শুরু হয় আতশবাজির খেলা। আকাশ ছেয়ে যায় ফানুসের আলোয়। মহল্লায় মহল্লায় ওঠে হর্ষধ্বনি। একটানা পটকার আওয়াজে কান ঝালাপালা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পটকার আওয়াজ আর হর্ষধ্বনি বেড়েই চলে। প্রতিটি ভবনের ছাদে ফানুস ওড়ানোর আয়োজনে মানুষের পদচারণায়ও মুখরিত ছিল। এমনি বাঁধভাঙা আয়োজনে বরণ করে নেয়া হলো ২০২৩ সালকে। যেখানে আনন্দ-উৎসবের কমতি ছিল না। তবে উৎসব পালনের বাগারম্বড় ছিল।

 

ঢাকায় থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের আয়োজন করার সুযোগ ছিল না। কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসাবাড়ির ছাদকেও। কিন্তু তাতে থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপনকে। আতশবাজি আর ফানুসে ভরপুর ছিল ঢাকার আকাশ। রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ প্রায় অধিকাংশ ভবনের ছাদেই ছিল আতশবাজি আর ফানুস ওড়ানোর আয়োজন। অনেকে আবার ছাদে বারবিকিউ পার্টিসহ পারিবারিক নানা আয়োজন করেছে। নতুন বছরের প্রথম প্রহরেই রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে দেখা গেছে।

 

রোববার থেকে নতুন দিনপঞ্জি ধরে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। অফিসে, পাড়া-মহল্লায় এমনকি প্রিয়জনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু হয় বছরের প্রথম দিন। মোবাইল ফেসবুক, হোয়াটসআপ মেসেঞ্জারে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরে ওঠে। সকাল থেকে তরুণ যুগল, শিক্ষার্থী, কিশোর-কিশোরীরা পরস্পরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন বছর বরণ করে নেয়। প্রথম দিনে ফুলের দোকানগুলোয় ছিল উপচেপড়া ভিড়। দেশে যে কয়টি জাতীয় দিনে ফুলের চাহিদা শতগুণ বেড়ে যায় তার মধ্যে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করার উপলক্ষে একটি। রাজধানীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ফুলে দোকানিরা পসরা সাজিয়েছে।

 

বর্ষবরণে ফুলের চাহিদা যেমন বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে ফুলের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তারপরও বর্ষবরণে আগ্রহের ঘাটতি ছিল না কারো মধ্যে। এদিন সকাল থেকে তরুণ তরুণীরা সেজেছিল নতুন সাজে। কেউ নতুন শাড়ি পরে আবার কেউবা পাঞ্জাবি পরেই পরস্পরকে আলিঙ্গন করেছে। ফুলের দাম পেয়ে মুখে হাসি ছিল ব্যবসায়ীদেরও। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে ২০২৩ সালকে স্বাগত জানায় ঢাকাবাসী। আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ। কেউ আইন মানেনি। নিষেধাজ্ঞা ভেঙেই বর্ষবরণ উৎসবে মিলিত হয় সবাই।

 

পটকা ফোটানোর একটানা শব্দে মানুষকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অসুস্থ ও রোগীদের জন্য এসব আয়োজন অনেকটা অস্বস্তিকর বিষয়ে পরিণত হয়। তবে দিনের শুরুতে বর্ষবরণের ধরন পাল্টে যায়। রাতে যেখানে পটকা আর আতশবাজির উৎসব ছিল। দিনের শুরুতে হয় ফুল দিয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন আর কেক কাটার পালা। অনেকেই কেক কেটে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। কোথাও কোথাও নতুন বছরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

 

এদিকে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরে ওড়ানো ফানুসে পুরান ঢাকার লালবাগ ও সদরঘাট এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বলেন, সদরঘাটের হকার্স মার্কেটের ছাদে একটি ফানুস পড়ে আগুন ধরে যায়। ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়, তবে যাওয়ার আগেই আগুন নিভে যায়। একইভাবে লালবাগে লাগা আগুনও কিছুক্ষণের মধ্যে নিভে যায়।

 

এছাড়া মিরপুরে একটি ছোট আগুনের সংবাদ পাওয়া গেলেও সেটি ফানুস থেকে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারের ওপর ফানুস এসে পড়ায় ২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল চলাচল। রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সকাল ১০টার পর মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, গতরাতে ওড়ানো অনেক ফানুস মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে এসে পড়েছিল।

 

এতে দুর্ঘটনা রোধে মেট্রোরেল চলাচল ২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। ফানুস অপসারণ শেষে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ফানুস ওড়ানো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরও নিয়ম ভেঙে রাতে ফানুস ওড়ানো হয়েছে। আতশবাজি ফুটেছে। ফানুসের ফলে মেট্রোরেলের বৈদ্যতিক তারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। নববর্ষের প্রথম দিনে সরকারি অফিস আদালতের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে ছিল নানা আয়োজন। বাহারি খাবারের আয়োজন প্রতিবেশীকে আপ্যায়ন করেছেন অনেকে। রেডিও, টিভি এবং সংবাদপত্রের পাতায় বর্ষবরণ নিয়ে ছিল নানা আয়োজন।

 

এছাড়া রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বর্ষবরণের নানা আয়োজন ছিল। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা একে অপরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দ জানান। ক্ষামতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version