-->
শিরোনাম

দারিদ্র বিমোচনের কৌশল হিসেবে ভ্যাট প্রথা বাতিল করার আহ্বান 

১২ নাগরিক সংগঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
দারিদ্র বিমোচনের কৌশল হিসেবে ভ্যাট প্রথা বাতিল করার আহ্বান 

“কর দেবে ধনীরা, দরিদ্ররা নয়” বক্তব্য নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ৫৪তম সম্মেলনের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী চলমান নাগরিক সমাজের নেটওয়ার্ক ফাইট ইনইকুয়েলিটি এলায়েন্সের সাথে সংহতি জানিয়ে আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি)-এর আহ্বানে বারোটি নাগরিক সমাজ সংগঠন একটি সমাবেশের আয়োজন করে।

 

সমাবেশে বলা হয়, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের মাঝে যে তীব্র আয়বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তা দূর করার জন্য নিবর্তনমূলক কর ব্যবস্থা বাতিল করা প্রয়োজন।

 

ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি) আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম, সিপিআরডি, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, অনলাইন নলেজ সোসাইটি, এ্যাসোড, ওয়াটার কিপার বাংলাদেশ, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, সিএসআরএল, জেএসকেএস ও কোস্ট ফাউন্ডেশন। সমাবেশ পরিচালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এএসএম বদরুল আলম।

 

সমাবেশ থেকে সুপারিশ করা হয়, কর ও রাজস্ব প্রদান কেবলমাত্র ধনী মানুষের দায়। কর ফাঁকি রোধ করাসহ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষম ও ন্যায্যতাভিত্তিক কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুঁজি ও মুনাফা বিদেশে পাচার রোধে গবেষণা ও অনুসন্ধানসহ অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। সকল ধরনের পরোক্ষ কর পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার মাধ্যমে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপর থেকে করের বোঝা লাঘব করতে হবে।

 

বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, পরোক্ষ করের মাধ্যমে মূলত একজনের কর অন্যজনকে দিতে বাধ্য করা হয়। একটি কোম্পানির উপর ধার্য করা ট্যাক্স প্রদান করে ক্রেতা সাধারণ। এতে দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যে কোম্পানি আয় করছে, সে কর থেকে অব্যাহতি পায়। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা দরকার।

 

ইক্যুইটিবিডি-র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে পুঁজি ও মুনাফা পাচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক ট্যাক্স নেটওয়ার্কের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন। এজন্য এ নেটওয়ার্ককে জাতিসংঘের আওতাধীন করতে হবে এবং স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এর সদস্য বানাতে হবে। কারণ, এসব দেশ থেকেই বিপুল পরিমাণে মুনাফা ও পুঁজি পাচার হয় উন্নত বিশ্বে।

 

সিপিআরডি’র ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কর ফাঁকি দেয়া একটা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। পরোক্ষ করা হ্রাস করার জন্য আয়কর এবং সম্পদের উপর কর আদায়ের উপর জোর দিতে হবে। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, একটা বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা বিলোপের জন্যই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। অথচ এখন বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। একটা জবাবদিহিতামূলক ও সুশাসনভিত্তিক কর ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব।

 

অনলাইন নলেজ সোসাইটি’র প্রদীপ কুমার রায় বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ দরিদ্র মানুষ ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বহুবার প্রশংসিত হয়েছে। আমরা চাই, বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামসহ এ ধরনের সম্মেলনে বাংলাদেশ বৈষম্য ও দারিদ্র বিমোচনের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠুক।

 

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এএসএম বদরুল আলম বলেন, ভ্যাটসহ সকল পরোক্ষ কর পর্যায়ক্রমে হ্রাস করে দরিদ্রের উপর করের বোঝা কমাতে হবে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়াতে পুঁজিপতি ও করপোরেশনসহ সকলকে প্রত্যক্ষ করের আওতায় আনার ব্যাপারে জোর দিতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version