-->
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার আশ্বাসে অনশন ভাঙল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার আশ্বাসে অনশন ভাঙল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ারের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার অনশন ও গণঅবস্থান ভাঙল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘুবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা।

 

প্রতিশ্রুত অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজানৈতিক উপদেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি শনিবার বিকাল ৪টায় অনশনস্থলে উপস্থিত হয়ে এ আশ্বাস দেন। আর অনশনের দাবি ও কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেন।

 

অনশন কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজনে বিশ্বাস করি না। আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

 

বিগত নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিসমূহ সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অবশ্যই এ সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে। তিনি জানান, বৈষম্য বিলোপ আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে ইতোমধ্যেই উপস্থাপন করা হয়েছে। বিলটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাধীন রয়েছে।

 

দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিলটি সংসদে পাশ করা হবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন শেখ হাসিনা সরকারই প্রণয়ন করেছে। এই আইন প্রয়োগ করে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেখানে যেখানে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখে সঙ্কটের সমাধান করা হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও চুক্তি অনুসারে পার্বত্য ভূমি কমিশনও শেখ হাসিনা সরকার সম্পাদন করেছে।

 

এক্ষেত্রে চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। বাকি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি এখনো সম্ভব হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রেও দ্রুত তম সময়ে সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

 

কবির বিন আনোয়ারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি এই পর্যায়ে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদেরকে সবাই আশ্বাস দেয় আর প্রতারণা করে। আমরা অতীতেও বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। এবার আর প্রতারণার শিকার হতে চাই না। অক্টোবরের মধ্যে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করবেন কিনা সেটা আমরা দেখতে চাই।

 

এবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আর ভোট চাইতে পারবেন না। আর ভোট না চেয়ে আমাদের ভোট পাবেন এমনটা আর মনে করা ঠিক হবে না। আমরা আজ অনশন প্রত্যাহার করলেও ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ আমরা করবো। এর মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমরা সেখান থেকে পরবর্তী অবস্থান ঘোষণা করবো। এরপর কবির বিন আনোয়ার রাণা দাশগুপ্তসহ অনশনকারী অন্যান্য নেতাকর্মিদের জলপান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

 

রাণা দাশগুপ্তসহ অনেকে অসুস্থ, ২ জন হাসপাতালে:

গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া অনশন পালনকালে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্তর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থা বেশি অবনতি হলে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একদল চিকিৎসক এসে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন।

 

চিকিৎসকরা জানান, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই সমীচীন। কিন্তু রাণা দাশগুপ্ত অনশনস্থল ছেড়ে কোনোভাবেই হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। পরে তাকে অনশনস্থলেই স্যালাইন প্রয়োগসহ অন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 

এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অনশনজনিত দুর্বলতা ও অন্যান্য জটিলতায় আক্রান্ত হলে সেখানে তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রীমতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শ্রীমতি শিখা মন্ডল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

 

অনশনে সংহতি বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের:

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে দুইদিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও ডাকসুর সাবেক জি এস ডা. মুশতাক হোসেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি’র প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা মকবুল এলাহী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভ‚ঞা, জগন্নাথ হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল প্রমুখ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version