-->

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম-লোডশেডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম-লোডশেডিং

বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে লোডশেডিংও। পাশপাশি দেশজুড়ে অব্যাহত আছে তাপপ্রবাহ। ফলে বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা, অস্বস্তিকর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

 

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। গরমে দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা বেশি, সেই সময়েই সরবরাহ কমে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে দিনে-রাতে সবসময় চলছে লোডশোডিং। তবে রাতে যখন মানুষ ঘুমাতে যায়, বিশেষ করে মধ্যরাত ও শেষ রাতে লোডশেডিংয়ে মানুষ বেশি বিরক্ত।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকলে সহ্য করা যায়। কিন্তু কর্মব্যস্ত দিন শেষে মানুষ একটু আরামে ঘুমাতে চায়। লোডশেডিং সেই ঘুমকে কেড়ে নিচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সবাই অপেক্ষা করছে বৃষ্টির।

 

কিন্তু আবহাওয়া অফিস বৃষ্টির সুখবর দিতে পারেনি। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই খুব তাড়াতাড়ি।

 

আবহাওয়া অফিস জানায়, তীব্র এ গরমের মধ্যে দেশের দু-এক জায়গায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে তাতে তাপ খুব একটা কমেনি।

 

মনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে দেশের সর্বোচ্চ ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তারপরও সেখানে তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই বৃষ্টি হলেও তাপ কমছে না।

 

কারণ, যে পরিমাণ বৃষ্টি হলে তাপ কমবে, তা হচ্ছে না। আবহাওয়াবিদরা জানান, প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু দেশের উপকূলে প্রবেশ করে। এটি সারা দেশে বিস্তার লাভ করে। এর ফলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এ বছর মৌসুমি বায়ু আসতে দেরি হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির আশাও দেখছেন না তারা।

 

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, মৌসুমী বায়ু এখনো বাংলাদেশ উপক‚ল থেকে অনেক দূরে আছে। টেকনাফের উপকূলে আসতে পারে ১২ জুনের দিকে। এরপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি। তবে তার আগে ১২ জুন থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে।

 

তিনি বলেন, এই মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়ে আবহাওয়া এমনই থাকে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় মানুষ তাপমাত্রা যা তার চেয়ে বেশি অনুভব করছে। ঘাম হচ্ছে অতিরিক্ত। ফলে ভোগান্তিও বেশি।

 

এদিকে এই সময়ে চলমান তাপপ্রবাহের তিনটি কারণের কথা বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। যার একটি ঘূর্ণিঝড় মোখা।

 

তারা জানান, সাইক্লোন মোখার কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছিল। ফলে ভারত-বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি। মোখার সময় এই পুরো বেল্ট ওভারহিটেড হয়ে যায়। এটা একটা কারণ বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম।

 

তিনি জানান, মোখার প্রভাবে এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আর সে থেকে লু হাওয়া বইছে বাংলাদেশের দিকে। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য, যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে বাতাসের গতিবেগও এখন অনেক কম বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়ছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ জানিয়েছে, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

সবশেষ আবহাওয়ার বার্তা অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীতে তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

এদিকে গরমে ঘেমে আরো অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে পরিবেশ। সবচেয়ে কষ্টে ভুগছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে রিকশাওয়ালা, বাসের ড্রাইভার-হেলপার, হকার, নির্মাণ শ্রমিকরা এই তীব্র তাপকে উপেক্ষা করেই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে।

 

২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

 

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version