-->

আমদানির খবরে কমছে পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমদানির খবরে কমছে পেঁয়াজের দাম

ভারত থেকে আমদানির অনুমতি মিলছে এমন খবরে দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমছে। সকালে যে পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল সন্ধ্যায় তা ৭০ টাকায় নেমে আসে। ঢাকার শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয় রোববার জানায়, আজ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া শুরু করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা। এরপরই পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করে।

 

এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ এলে দাম আরো অনেকটা কমে যাবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক কম। পুরান ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আগের দিন যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে, সেটা কমতে কমতে নেমেছে ৬৫ টাকায়।

 

শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামে সাধারণত দ্রুত ওঠানামা হয়। অন্য বাজারে প্রভাব পড়ে একটু দেরিতে। কারওয়ান বাজারের আড়তে ঘুরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে ৫ কেজি কেনার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দর ৯২ টাকা, কোথাও ৮৬ টাকা, কোথাও ৮২ টাকা এবং কোথাও ৮০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

 

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আগের দিন তা ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এফ এম ট্রেডার্সের কর্ণধার মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমদানির অনুমতির ঘোষণা আসার পর দাম অনেক পড়ে গেছে। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। দাম আরো কমবে, এ আশায় কেউ পেঁয়াজ কিনছেন না।

 

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন ভালো হলে মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, পেঁয়াজের উৎপাদন আরো কম।

 

সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫ লাখ টনের কিছু বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।

 

একইভাবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। কমিশন এও বলে থাকে, উৎপাদনের ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণ ও পরিবহনকালে নষ্ট হয়। পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়।

 

কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল মন্ত্রণালয়। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।

 

কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিতে অশুল্ক বাধা তৈরি করে রাখার কারণে এক মাসে দেশে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ছিল।

 

এদিকে ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদন বলছে, ভারতে গত ৩০ মে পাইকারিতে পেঁয়াজের টনপ্রতি দর ছিল ১২১ ডলার। এতে কেজিপ্রতি দর পড়ে ১৩ টাকা। পেঁয়াজে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ‘পড়তা’ (খরচসহ দাম) পড়তে পারে কেজিপ্রতি ২০ টাকার আশপাশে। এরপর যে দামে বিক্রি হবে, সেটাই মুনাফা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version