-->

বাজারে ক্ষতিকর পদার্থে তৈরি ঘি!

জাহেদুল ইসলাম আরিফ, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
বাজারে ক্ষতিকর পদার্থে তৈরি ঘি!
রাঙ্গুনিয়ার হাটবাজারে মিলছে চটকদার মোড়কের এসব ভেজাল ঘি

জাহেদুল ইসলাম আরিফ, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম): দোকানের আলমারি বা ডিসপ্লে থেকে নয়, ক্রেতা আসলে আলাদা করে রাখা বস্তা থেকে বের করে দেওয়া হয় ঘি। সেই ঘি আবার অনেক ক্ষেত্রেই হয় ভেজাল উপাদানে তৈরি। অনুসন্ধান বলছে, এসব নকল ঘি তৈরি হয় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ডালডা রং, এমনকি গাম দিয়েও।

 

জানা যায়, পবিত্র রমজান মাসে ঘিয়ের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহকে পুঁজি করে বাজারে নকল ও ভেজাল ঘি সরবরাহ করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে চটকদার মোড়কের এসব ভেজাল ঘি কিনছেন ভোক্তারা। বাহারি নামের এসব ঘি বিএসটিআইয়ের নকল সিল লাগিয়ে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেকক্ষেত্রে ডালডা রং আর ফেভিকল গাম দিয়ে তৈরি হয় এসব গাওয়া ঘি। রমজান উপলক্ষে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর তৈরি করা এসব ভেজাল ঘিয়ে এখন সয়লাব রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন অলিগলি ও হাটবাজার।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার রোয়াজারহাট, চন্দ্রঘোনা, মরিয়ম নগর, গোচরা, শান্তিরহাটসহ বিভিন্ন হাটবাজারে অধিকাংশ দোকানে খুচরা ও পাইকারি দরে ভেজাল ঘি বিক্রি হচ্ছে। অন্তত ১০টি ভুঁইফোড় ও অবৈধ কোম্পানির ঘি বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে কয়েকটি নিত্যপণ্যের মুদির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, এসব ভেজাল ঘি দোকানের আলমারির ডিসপ্লেতে না রেখে বস্তার মধ্যে রাখা হয়। সেখান থেকে ভোক্তাদের কাছে অবাধে করা হয় বিক্রি। আবার কিছু কিছু ঘিয়ের মোড়কে কোনো স্টিকারেরই দেখা মেলে না। নেই কোনো বিএসটিআই সিল, এমনকি নেই নির্ধারিত মূল্যের কোনো স্টিকারও। এসব ঘিয়ের বিএসটিআই অনুমোদন আছে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান ক্রেতারা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি জানান, এসব বেনামি ঘি তারা নির্দিষ্ট পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনেন। ঘিয়ের মোড়কে বিএসটিআইয়ের চিহ্ন থাকলেও বাস্তবে এসবের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

 

আবছার হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, নামি-বেনামি এ সব ঘিয়ের মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল, চেনা মুশকিল। মাসের বাজার করার সময় অন্য জিনিসের সঙ্গে ঘিও নেয়া হয়েছে। মাঝে-মধ্যে দেখা যায়, এসব ঘি খেয়ে শরীরে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়।

 

ভেজাল ঘি স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, রং, ফ্লেভার আর গাম দিয়ে যেসব ভেজাল ঘি তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো মানুষের শরীরের কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। এসব ভেজাল ঘি নিয়মিত খেলে মানব শরীরে ক্যান্সারও হতে পারে।

 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব ঘি জব্দ করা হয়েছে। এরপরেও যদি কোনো ব্যবসায়ী বিক্রি করে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version