-->

যানজট নিরসনে ডিএমপির নির্দেশনা কাজে আসছে না

শাহীন রহমান
যানজট নিরসনে ডিএমপির নির্দেশনা কাজে আসছে না

শাহীন রহমান: পবিত্র রমজানে যানজট নিরসনে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু তাদের সেই নির্দেশনা কোনো কাজে আসেনি। সুফল মেলেনি যানজটের হাত থেকে। সোমবার রমজানের প্রথম কর্মদিবসেই রাজধানীজুড়ে ভয়াবহ যানজট লক্ষ্য করা গেছে। রমজানে একই সময়ে অফিস-আদালত এবং স্কুল খোলা থাকায় রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মস্থলে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।

 

রমজান মাসে সরকারি সময়সূচি অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি এবং বেসরকারি অফিসসূচি সকাল ৯টা থেকে সাড়ে তিনটা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে এবার রমজানের প্রথম তিন দিন ছুটি থাকায় সরকারি এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। রমজানের প্রথম এই কর্মদিবসেই যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।

 

সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কেউ অফিসে পৌঁছতে পারেননি।

 

পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীতে যানজট ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে আগেই ১৫ ধরনের ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক বৈঠকে রমজান মাসে যানজট এড়াতে এসব নির্দেশনা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও প্রথম কর্মদিবসে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ ছিল না।

 

এর আগে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, রমজান মাসে রাস্তায় মানুষের চলাচল বাড়ে। মানুষ যেন যানজট ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে, সে জন্য ১৫ ধরনের নির্দেশনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

পরে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীতে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কোনো বাস সড়কে রেখে বা থামিয়ে যাত্রী উঠাতে পারবে না। যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় যাতে বাসে উঠতে পারে, তা সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের খেয়াল রাখতে হবে।

 

মহানগরীতে টার্মিনাল-সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে বাসগুলো দাঁড়াতে পারবে না। অযাচিত যানজট এড়াতে মহানগরের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে যানবাহনগুলোকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।

 

রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে বিরত থাকতে হবে। আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা না করে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। কোনো বাসের যদি দূরপাল্লা বা নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের অনুমোদন না থাকে, তাহলে বাসটি সেসব রুটে চলাচল করতে পারবে না।

 

নির্দেশনায় বলা হয়, রমজানের সময় সকালে অফিসগামী ব্যক্তিরা হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন। ইফতারের আগমুহূর্তে বাসার উদ্দেশে রওনা না দিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখবেন। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাসসহ অন্য যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে চলাচল করবেন।

 

তবে যানজট রোধে ডিএমপির এই নির্দেশনা কোন কাজে লাগেনি। প্রথম কর্মদিবসে কেউ সময়সূচি মেনে অফিস করতে পারেননি।

 

শুধু অফিসগামী নয়। বেলা সাড়ে তিনটায় অফিস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রুটে ভয়াবহ যানজট লক্ষ্য করা গেছে। একসঙ্গে অফিস থেকে বের হওয়ার কারণে পরিবহন সংকট দেখা দেয়া। কে কার আগে গাড়িতে উঠতে পারবে, সে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে ভয়াবহ বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় গাদাগাদি করে যাত্রীদের বাসে উঠতে দেখা গেছে।

 

রমজান মাস শুরু হওয়ার পর টানা তিন দিন ছিল ছুটি। যার কারণে গত তিন দিনে রাজধানীতে ছোট-বড় কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। ছুটি শেষে রমজানের প্রথম কর্মদিবসে রোববার ভয়াবহ যানজটে কবলে পদে ঢাকাবাসী।

 

রোজা রেখে যানজটে গাড়িতে বসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অফিসগামী মানুষকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে যানজটের পরিমাণও বাড়ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে। আবার অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময় এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

 

সরেজমিন সোমবার রাজধানীর উত্তরা, হাউসবিল্ডিং, বিমানবন্দর হয়ে খিলক্ষেত বিশ্বরোড হয়ে রেডিসনের সামনে দিয়ে বনানী মহাখালী পর্যন্ত সড়কে, অন্যদিকে, মহাখালী থেকে সাতরাস্তা, মগবাজার হয়ে রমনা, মৎস্য ভবন এবং মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলামোটর-শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন-প্রেসক্লাব পর্যন্ত যানবাহনের প্রচন্ড চাপ দেখা গেছে।

 

এছাড়া খিলক্ষেত থেকে কুড়িল হয়ে নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

 

সড়কে তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। অনেকেই স্থবির হয়ে থাকা যানবাহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা করেছেন কর্ম ও গন্তব্যস্থলে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, দুই ঘণ্টা আগে বের হয়েও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি। ঢাকা শহরের যানজট প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এখন রাস্তায় আর সময় বলে কোনো কথা নেই।

 

কারণ ছাড়াই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রী-পথচারী, চালক ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সবাই মিলে পদক্ষেপ নিলে ও ট্রাফিক আইন মেনে চললে সড়কের এ যানজট অনেকটা কমে আসত।

 

যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তিন দিন ছুটি থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে একসঙ্গে সবাই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া রমজানে অফিস টাইম পরিবর্তনের কারণেও রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে রাজধানীজুড়ে এমন যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

 

বনানী ও বিমানবন্দর সড়কের যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রমজানের প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় গাড়ির চাপ তুলনামূলক বেশি।

 

তিন দিন বন্ধ থাকার পর রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। নতুন সময়সূচিতে অফিস শুরু হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া এখনো সব স্কুল বন্ধ হয়নি। অনেক স্কুল খোলা। একসঙ্গে সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি বের হওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে।

 

পবিত্র রমজান মাসে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আলাদা অফিস সময় আগেই নির্ধারণ করে দেয় সরকার। রোজার প্রথম দিন থেকে এ সময়সূচি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম তিন দিন ছুটি থাকায় সোমবার (২৭ মার্চ) থেকে তা কার্যকর হয়।

 

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমজান মাসে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিস চলবে সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। জোহরের নামাজের জন্য বেলা সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পবিত্র রমজান মাসে ১৫ (পনেরো) রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।

 

এই সময়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে ক্লাস। সংশ্লিষ্টরা এবং ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অফিস-আদালত এবং স্কুল একই সময়ে খোলা থাকায় রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আগামী ১৫ রমজান পর্যন্ত যানজটের হাত থেকে রেহাই মিলছে না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version