-->

নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে নীরব কূটনীতিকরা 

নিখিল মানখিন
নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে নীরব কূটনীতিকরা 

নিখিল মানখিন: বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতায় মুখর দেশের রাজনীতির মাঠ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসছে বিদেশি কূটনীতিকদের আলাপচারিতায়।

 

কিন্তু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে কোনো কথা বলছেন না তারা। শর্ত মেনে নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে এমন শর্ত বা পরামর্শ থাকছে না তাদের আলাপে। অর্থাৎ নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের সৌজন্যমূলক কথাবার্তা ও দায়িত্ব পালনেই সীমাবদ্ধ রাখছেন কূটনীতিকরা। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ।

 

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিকদের বিচরণের বিষয়টি বেশ আলোচনায় উঠে উঠেছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি বলছে, অভ্যন্তরীণ আন্দোলনের চেয়েও সরকারের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ।

 

পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের ভাষ্য : জনগণের আস্থা নেই বলেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না।

 

জাতীয় নির্বাচনী বছর পার করছেন দেশের মানুষ। দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আদায় করতে নানা উপায়ে চলছে শোডাউন। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি বেড়ে গেছে বিদেশি কূটনীতিকদের পদচারণা।

 

নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই যেন বেড়ে যায় বাংলাদেশের রাজনীতি আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকসহ প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে বড় দলগুলোর যোগাযোগ। কখনো কখনো তাদের উৎসাহী অবস্থান কূটনীতিকদের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়।

 

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকার, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা বৈঠক করছেন।

 

সর্বশেষ, ২১ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে দলীয় একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।

 

এ ধরনের আলোচনার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে ভালো একটা নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলছেন।

 

কিন্তু তারা বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন না। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপিকে পেতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

 

এমন ব্যবস্থায় বিএনপিকে ভোটে আনার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্যোগকেও স্বাগত জানানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কখনো দলীয় কার্যালয় কিংবা কখনো নেতাদের বাসায় নিয়মিতই বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে আনছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি।

 

এসবের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১২ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৮ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা।

 

বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে তারা এমন সাফ কথা জানিয়ে দেন। এমন কঠিন শর্ত পূরণে বিএনপিকে পাশে থাকার আশ্বাস বা সরকারকে চাপ প্রয়োগ কোনোটাই জোরালোভাবে বলে আসতে পারেননি বিদেশি কূটনীতিকরা। অর্থাৎ এটি ছিল কূটনীতিকদের কূটনৈতিক বৈঠক বা আলাপচারিতা।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা নিজেদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন করতে চান। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা তৈরি করছেন। এর বাইরে দেশে-বিদেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছেন।

 

বিএনপি চায় না কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিক। তবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশা করছেন।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে তৎপর বিএনপি। বির্ভিন্ন কৌশলে আন্তর্জাতিক মহলের বিবৃতি প্রদানে সফলতাও পেয়েছেন তারা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে কূটনীতিকদের নীরবতায় হতাশ তারা।

 

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশগ্রহণের ডাক প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করানোর ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকরা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু এ বিষয়ে বরাবরই নীরব থাকছেন কূটনীতিকরা।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। দেশে তাদের আন্দোলনের চেয়েও সরকারের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক কূটনৈতিক তৎপরতায় সফলতা দেখতে পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত কয়েক বছরে নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বৈদেশিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল।

 

তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা সামাল দিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ। তিক্ততা চরম পর্যায়ে যাওয়ার আগেই দলটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সুনজরে পড়েছে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকার। বাংলাদেশে আগমন ঘটছে বিশ্বের একের পর এক প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের।

 

গত সোমবার কাতার সফরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি শক্তির যে চাপই আসুক না কেন, জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সরকার তা করবে।

 

এমন কোনো চাপ নেই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ; আর ওপরে আল্লাহ আছে; আর আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে। কাজেই, কে কী চাপ দিল, না দিল এতে কিছু আমাদের আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার আমরা সেটাই করব। জনগণের কল্যাণে যে কাজ করার সেটাই করব। এরকম বহু চাপ আমাকে দেয়া হয়েছিল।

 

পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেয়া হয়নি। অনেক চাপের পরও কিন্তু নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু বানিয়ে দেখিয়েছি। ৭০ বছর বয়সেও একটা লোক ব্যাংকের এমডি থাকতে চায়, সেই চাপও শেখ হাসিনা সহ্য করেছে। এমন কোনো চাপ নেই, যা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে।

 

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তবে আমি বিশ্বাস করি এতে কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়তো সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তা মোকাবিলা করবে আমাদের জনগণই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

এদিকে, সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কোনো চাপ নেই, যথাসময়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবে কমিশন, ইভিএমের বরাদ্দ না পেলে ব্যালটে নির্বাচন হবে।

 

তিনি বলেন, কমিশন সাংবিধানিক নিয়মে নির্বাচন আয়োজন করবে, নির্বাচনে আসতে কোনো দলকে বাধ্য করা হচ্ছে না, বরং আহব্বান জানানো হয়েছে। আমরা সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন চাই। বিরোধী দল হিসেবে (বিএনপি) একটি বড় দল, যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে নির্বাচন আরো অংশগ্রহণমূলক হবে।

 

তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version