-->
বেড়েই চলেছে ঢাকার রাস্তায় শব্দদূষণের মাত্রা

মোটরসাইকেলের বেপরোয়া হর্নে অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোটরসাইকেলের বেপরোয়া হর্নে অস্বস্তি

ঢাকাকে এখন মোটরসাইকেলের শহর বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। অলিগলি থেকে ব্যস্ততম সড়কে শয়ে শয়ে দাপিয়ে বেড়ানো মোটরসাইকেলের দেখা মিলবেই। তবে দুই চাকার এ বাহনের বেপরোয়া হর্ন নতুন নাগরিক উৎপাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, সব দিক দিয়ে ঢাকা এমনিতেই দূষণের শহর। তার ওপর গাড়ির হর্ন শব্দদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে।

 

বিশেষ করে কারণে-অকারণে মোটরসাইকেলের হর্ন নাগরিক শান্তির বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। রাজধানীবাসীর কাছে নতুন এ আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই নতুন নতুন মোটরসাইকেল রাস্তায় নামছে। উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের সঙ্গে সড়কেও বাড়তি চাপ তৈরি করছে এসব দ্বিচক্র মোটরযান।

 

অভিযোগ রয়েছে, মূল রাস্তা থেকে অলিগলি কিংবা ফুটপাতে বেপরোয় মোটরসাইকেলের ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় সাধারণ পথচারীদের। জ্যাম কিংবা সিগন্যাল চলাকালেও তারা থামে না। একটু ফাঁক পেলেই চালানো শুরু করে। বাহাদুরী জাহির করতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনায় প্রাণও হারাচ্ছে। তবু এদের বাড়বাড়ন্ত বেপরোয়া ভাব কমছে না।

 

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, যানবাহনের হর্নের কারণে কানে কম শোনা থেকে শুরু করে প্রতিদিনই নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রাজধানীর মানুষ। আর এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে উচ্চশব্দের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে জানান তারা। রাজধানীর বেশকিছু বাস পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল সাধারণ মানুষের জন্য যেন এক মূর্তমান অস্বস্তি। এ বাহনটির কারণে গণপরিবহণে উঠতে-নামতেও অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কখনো কখনো ধাক্কাও লাগছে বাইকের।

 

সেইসঙ্গে ঝাঝালো তীব্র কান ঝালাপালা করা হর্ন তো আছেই। যানজটপূর্ণ সড়কে অযথায় বাজিয়ে চলেছে হর্ন। সাধারণের অভিযোগ, মোটরসাইকেলের এমন বেপরোয়া পরিস্থিতি যেন দেখার কেউ নেই। মোটরসাইকেল চলাচল ও হর্ন নিয়ন্ত্রণের কারো নজর না থাকায় রাজধানীবাসী স্বাস্থ্য ও মানসিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

 

তাদের প্রশ্ন, কে থামাবে বেপরোয়া হর্ন ব্যবহার, এর দায়ভার কার? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মনিবুর রহমান বলেন, ‘অস্বাভাবিক মাত্রায় হর্ন বাজায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা দিই। অনেক সময় অভিযানও চালানো হয়।’

 

রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির চলাচলের বিষয়টি টেনে পুলিশ কর্মকর্তা মনিবুর রহমান বলেন, ‘দেখা যায় একটা গাড়ি হর্ন দিলেই সবকটা একযোগে হর্ন দিতে থাকে। ফলে শব্দদূষণ হচ্ছেই। আমরা ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণে যা যা করার, তা কিন্তু করে যাচ্ছি।’ রাজধানীর শব্দদূষণ কাজ করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমÐলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

 

ক্যাপসের গবেষণার বরাতে তিনি তথ্য দেন, সড়কে শব্দদূষণের কারণে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ১১.৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ৩৩.৯ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়।’ ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘শব্দদূষণসহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।’

 

দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কত? বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০১০ সালে দেশি নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল কমবেশি সাড়ে ৭ লাখ। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে লাখখানেক মোটরসাইকেল যুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন উচ্চহারে বাড়তে থাকে। ২০২২ সালেই ৫ লাখের বেশি নতুন মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version