-->

২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বেশি বয়ঃসন্ধিকালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বেশি বয়ঃসন্ধিকালে

২০২২ সালে দেশে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এরমধ্যে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ৮৬ জন ।

 

শুক্রবার ভাচুর্য়াল সংবাদ সম্মেলন করে "স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে?" শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে আঁচল ফাউন্ডেশন।

 

ফলাফলে দেখা গেছে- স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যা করা ৪৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা স্কুল ও সমমান পর্যায়ের বেশি। ২০২২ সালে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের আত্মহত্যা করেছেন ৩৪০ জন, কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এদের মধ্যে ৪০৫ জনেরই বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আঁচল ফাউন্ডেশনের তরুণ গবেষকরা দেশের দেড়শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই সংগ্রহকৃত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সমন্বয়কৃত ফলাফল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী।

 

তিনি জানান, সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য এবং উপাত্ত থেকে জানা যায়- ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন। সংখ্যায় তা ৪০৫ জন এবং শতকরা হিসেবে ৭৬.১২ শতাংশ। এরমধ্যে নারী ৬৫.৯৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪.০৭ শতাংশ রয়েছেন।

 

সাত থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ৪৩ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। এরমধ্যে নারী ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, পুরুষ রয়েছেন ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

 

বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

 

এ বিষয়ে সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, তারা যে বয়সন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরীর কোন বিকল্প নেই।কি কারণে তাদের সংখ্যা গতবছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন,ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসকল বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।

 

তিনি বলেন, বয়সন্ধিকালীন মনের যত্ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ ভীষণ প্রয়োজন। স্ক্রিন বা মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিবারিক বন্ধন, পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটানোর চর্চা বাড়াতে হবে।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই আত্মবিশ্বাসী এবং সুস্থ মনোন গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ গুলো অনস্বীকার্য।

 

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আঁচল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামিরা আক্তার সিয়াম বলেন, "আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হলো ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা সর্বাধিক। ছোটবেলা থেকেই পরিবারিক, সামাজিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করতে শেখাতে হবে। নিজের আবেগীয় আচরন এবং অন্যের প্রতি সমব্যাথী হয়ে কীভাবে নেতিবাচক মন্তব্য বা পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে হয় তার চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে করে জীবনকে তুচ্ছ না ভেবে, ইতিবাচকভাবে যাপনের কৌশল রপ্ত করতে পারবে। এসব বিষয়ে সন্তানের সাথে পিতা মাতা কিংবা পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

 

পুরুষের চেয়ে নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার প্রবনতা বেশি। নারী ২৮৫ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬১ জন।

 

স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে, শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।

 

বিভাগ ভিত্তিক পর্যালোচনা

 

দেশের আট বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে; ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে; ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

 

মাস ভিত্তিক পর্যালোচনা

 

সমন্বয়কৃত তথ্যের মাসভিত্তিক পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, স্কুল এবং কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

 

দেখা যায়, এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন; যা ছিলো ৫০ জন। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

 

আত্মহত্যার কারণ

 

আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানাবিধ বিষয়ের সম্মুখীন হন যা তাদেরকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে বাধ্য করে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায় মান-অভিমান তাদেরকে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭.৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানের করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সাথে। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ যা ২৩.৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহ ৩.১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্থতা ২.০১ শতাংশ, মানসিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছেন ৩.১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে দায়ী কারণ জানা যায়নি।

 

তবে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরো বেশ কিছু ভিন্ন কারণও আমাদের সমন্বয়কৃত তথ্যে আমরা পেয়েছি। যেমন: আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ায় ৪ জন, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হয়ে ৬ জন, গেইম খেলতে বাঁধা দেয়ায় ৭ জন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এছাড়াও অন্যান্য কারনের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যা।

 

পারিবারিক কলহের স্বরূপ

 

মামার বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভাই-বোনের মধ্যে কলহ, বাবাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কলহ, পরীক্ষা দিতে না চাওয়ায় বাবা-মায়ের সাথে কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে সন্তানের সাথে কলহ ইত্যাদি বিভিন্ন পারিবারিক কলহ ৩.১৪ শতাংশ স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার জন্যে দায়ী। মোট আত্মহত্যাকারী স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ২.৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। শুধু কলেজগামী আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই কারণে আত্মহত্যা করেন ৪.৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

 

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার চিত্র নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন “আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের শিক্ষক এবং বাবা মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুকালে বাচ্চাদের উপর বাবা মায়ের প্রভাব যেমন বেশি থাকে, কৈশোরে সেই দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষকদের উপর। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক গঠনে তাঁদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বেশি। আমাদের দেশে সন্তান লালন পালনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে শেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। আবার সন্তান লালন পালনও যে শিক্ষণীয় একটি বিষয় তাও মানতে নারাজ অনেক বাবা মা-ই। ফলে সন্তানদের মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে বাবা মায়েরা অনেক ক্ষেত্রেই থাকেন উদাসীন। তাই সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি তত গুরুত্ব দিতে চান না।

 

স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শিক্ষকরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো শুনে মেন্টরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমাদের মনে রাখতে হবে এই বয়সে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক পরামর্শ পাওয়ার জায়গা অপ্রতুল।”

 

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবেলায় আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা

 

১. হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

 

২. সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদেরকে সহানুভূতির সাথে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা।

 

৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

 

৪. স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা।

 

৫. প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা।

 

৬. স্কুল-কলেজের ছাত্রকল্যাণ ফান্ডের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে তা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা সমাধান অনেকাংশে সম্ভব। এতে আর্থিক সংকটজনিত আত্মহত্যার হার কমে আসবে।

 

৭. প্রেম-প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে বা অজ্ঞাতসারে ধারণ করা গোপন ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার তথা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ ও সাইবার ক্রাইমের বিষয়ে শাস্তি উল্লেখপূর্বক বিশেষ প্রচারণাভিযান পরিচালনা করা।

 

৮. স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। এর মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য আত্মহত্যাকারীকে বাঁচানো যাবে।

 

৯. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেন্টাল হেলথ কর্নার খোলা। শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তির আওতায় এনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ট্রেনিং দেওয়া।

 

১০. কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিক্যাল সুবিধার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।

 

১১. শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্য্যশীলতার পাঠ শেখানো ।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version