-->

ঢাকায় বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণ

ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে অবস্থান করছে। গত ১০ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা (একিউআই) ছিল যথাক্রমে ৪৫১; ৪৭৪; ৬৩৭; ৫৫৯; ৩৬৩; ৪৭৯; ৩১৬; ২৩৩; ২৩৮; ৩০৭ এবং ৩১৪।

 

এই তথ্য একুওয়েদার এর। সংস্থাটি জানায়,০-৫০ একিউআই হলো ভালো মানের বায়ু। ৫১-১০০ একিউআই হলে মধ্যম মানের বায়ু। একিউআই ১০১-১৫০ হলে সেটি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। একিউআই ১৫১-২০০ হলে সেটি সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর। এই মান ২০১-৩০০ তে উন্নীত হলে সেটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। আর এই মান যদি ৩০১ অতিক্রম করে তাহলে সেটি বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই হিসেবে ঢাকার বায়ু ধারাবাহিকভাবে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে।

 

শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য জানানো হয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের একটি সভা কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

 

তিনি বলেন, দূষিত বায়ুতে অবস্থান করলে তাৎক্ষণিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে হতে পারে নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি মরণব্যাধি। এর মধ্যে নাকের অ্যালার্জি, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদ্রোগ, কিডনি ও লিভার রোগ, বন্ধাত্ব্য, শিশুর বিকাশজনিত সমস্যা, স্বল্প ওজনের বাচ্চা প্রসব, অকাল প্রসবসহ আরও নানা জটিলতা হতে পারে।

 

ফিটনেসবিহীন মোটরযান, নিম্নমানের জ্বালানি তেল ব্যবহার, সনাতনী পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালন, স্থাপনা নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ইত্যাদি বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। তবে এই দায় কোণ এক পক্ষের নয়। একদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব সব মিলিয়ে এই অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।

 

বিরাজমান বায়ুদূষণ রোধে বক্তারা উচ্চ আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 

এগুলো হলো-১. ঢাকা শহরের মধ্য বালি বা মাটি বাহী ট্রাক ঢেকে পরিবহন করা। ২. নির্মাণাধীন প্রকল্পসমূহ ভালোভাবে ঢেকে কাজ পরিচালনা করা। ৩. ঢাকার সড়কগুলোতে পনি ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া। ৪. সড়কে মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং কার্পেটিংয়ের ক্ষেত্রে আইন কানুন এবং চুক্তির টার্মস এন্ড কন্ডিশন নিশ্চিত করা। ৫. যেসব গাড়ি কালো ধোয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করা। ৬. সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলা চালকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ এবং যেসব গাড়ি পুরোনো হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। ৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহিনভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা। ৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধ করা। ৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখা এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনের মধ্যে ওই বর্জ্য অপসারণ করা।

 

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি প্রমুখ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version