-->

সারা দেশে টানা শীতের আভাস

শাহীন রহমান
সারা দেশে টানা শীতের আভাস

শাহীন রহমান: নতুন বছরের শুরুতেই দেশে শীতের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন কুয়াশা। সেই সঙ্গে তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসছে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড  কুয়াশার আবরণে ঢেকে আছে সারা দেশ। পাশাপাশি ৮ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এবার শীতের এই তীব্রতা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। ফলে এখনই শীতের হাত থেকে রেহাই মিলছে না।

 

আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে সারা দেশে কুয়াশার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে কুয়াশার পরিমাণ কমে যাবে। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা কম থাকবে। ফলে তাপমাত্রার হেরফের হলে শীতের হেরফের হবে না। কিছুদিন টানা শীতের কবলে থকেবে সারা দেশে। মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, দেশে গত চার দিন শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের তীব্রতা ছিল বেশ। তাপমাত্রার তুলনায় শীত বেশি অনুভ‚ত হওয়ার কারণ উত্তরের হিমেল বাতাস। সেই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় সারা দেশেই অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিম বাতাসে নাকাল হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর ভিড়। দেশজুড়ে এমন বাতাস বইতে পারে আরো কয়েক দিন।

 

এবার পৌষের শুরুতে শীতের দেখা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু মধ্য পৌষে এসে শীতের এই তীব্রতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পুরো ডিসেম্বরজুড়ে সাগরে ঘনঘন লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য ডিসেম্বরে সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ভারত মহাসাগরে শ্রীলঙ্কার কাছে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে পুরো ডিসেম্বরে শীত মেলেনি। সাগর থেকে এসব বাধা দূরে সরে যেতেই উত্তরের শীতল হাওয়া বাধাহীন হয়ে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাধাহীন শীত আরো এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে পারে।

 

এদিকে, শীতের পাশাপাাশি ঘন কুয়াশার কারণে দেশে নৌ ও সড়ক পথে যানবাহন চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেলায় হেডলাইট জ¦ালিয়ে সড়ক পথে চলছে গাড়ি। ঘন কুয়াশার কারণে দেশের নদীবন্দরগুলোতে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের সবজি বাজারে। সময়মতো পণ্য না আসায় শীতের কাঁচা সবজির দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

 

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত দুর্ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমনি নানা রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়েছে। এসব রোগ বেশি বাড়ছে উত্তরের জেলাগুলোতে। জানা গেছে, রংপুরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে এক সপ্তাহে ১৫ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে, যা এক সপ্তাহে স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে দ্বিগুণ।

 

গত এক সপ্তাহে মৃত্যুবরণ করা শিশুদের বয়স এক মাস থেকে তিন বছর। হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শিখলি খাতুন বলেন, শীতজনিত রোগে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ সপ্তাহে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

 

এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত দুর্ঘটনা। প্রচন্ড শীতে একটু উত্তাপ নিতে আগুন পোহাতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে উত্তরের জেলায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গত এক মাসে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া ২৮ রোগী ভর্তি হয়েছে বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে এক শিশু।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় সাধারণত গরম পানির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। এ সময় শিশুদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও প্রতিবন্ধীরা গোসলের পানি বা অন্যদের গোসলের গরম পানি ইত্যাদির কাছাকাছি যেন না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে গেলে শীতের তীব্রতার কারণে বোঝা যায় না। আগুন পোহানোর সময় শাড়ি শরীরের সঙ্গে ভালোভাবে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষকের খড় যেখানে আছে, তার থেকে দূরে আগুন পোহালে ভালো।

 

সম্ভব হলে আশপাশে কৃষকের খড় বা কারো ঘর নেই এমন স্থানে আগুন পোহানো ভালো। আগুন পোহানো হয়ে গেলে আগুন ভালোভাবে নিভিয়ে দিতে হবে। চুলার ওপর দড়ি টানিয়ে শীতের কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ কাজ একেবারেই করা যাবে না বলে তারা উল্লেখ করেন।

 

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কনকনে ঠান্ডার মধ্যে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। দেশের আটটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে এটি বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য হ্রাসের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকায় উত্তর/ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version