-->
সকলের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে অপচয় রোধ ও শুদ্ধাচারে জোর বিশেষজ্ঞদের

বাড়ছে চাহিদা, কমছে পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাড়ছে চাহিদা, কমছে পানি

দিন দিন নামছে পানি স্থর। মানুষের চাহিদা বাড়লেও বাড়ছে না পানি। ব্যবহার যোগ পানির পরিমাণ কমছেই। আইন থাকলেও তা যথাযথ প্রতিফলনেও রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি। সেক্ষেত্রে সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ। তাই পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে অপচয় রোধ ও শুদ্ধাচারে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

সোমবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানী ঢাকায় ‘ওয়াটার ইন্ট্রিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট: প্রোগ্রেস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা হয়।

 

আলোচনায় বক্তারা বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে অভাবে বাড়ছে পানি বাহিত নানা রোগ। সাত কোটি মানুষ নিরাপদ পানি এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষ সেনিটেশন বঞ্চিত। এই অবস্থায় আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তারা।

 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এনজিও ফোরাম, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরাম এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথভাবে এ গোল টেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

 

আলোচনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডর ডিরেক্টর আনোয়ার জাহিদ বলেন, পৃথিবীতে যত পানি আছে আমরা তার একভাগেরও কম ব্যবহার করতে পারি। ৯৭ ভাগ হচ্ছে সমুদ্রের লবণ পানি, দুই ভাগ বরফ হয়ে আছে, না গলা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারি না। এই যে এক ভাগেরও কম পানি, তার মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানি ০.৬ শতাংশ। কাজেই এই অল্প পানি নিয়েই সকল সেক্টরের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এটা আসলেই খুব কঠিন কাজ। কারণ আমাদের পানির চাহিদা বাড়ছে। পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহার যোগ পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কিভাবে? মিস উইজ করে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। এ ক্ষেত্রে ওয়াটার ইন্ট্রিগ্রিটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

 

কয়েকটি চ্যালেঞ্জের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার ওয়াটার লেভেল গত ৫০ বছরে ৭৫ থেকে ৮০ মিটার নেমে গেছে। নামলো কেন? শুধু ঢাকায় নয়; বড় বড় শহর গুলোতেও ওয়াটার লেভেল নেমে যাচ্ছে। ঢাকার কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তার মানে ইতোমধ্যেই আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলেছি। তারপরেও কিন্তু ঢাকা এবং ঢাকা চারপাশে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছি। যেখানে পানি সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে, সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পানি দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ ঢাকার চারপাশে আমরা শত-শত, হাজার-হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান করে ভূগর্ভস্থ পানি তুলছি। এতে করে কিন্তু ফাস্ট যে আমার প্রায়োরেটি ওয়াটার সাপ্লাই এটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হরাইজেন্টালি যে ওয়াটার ফ্লো টা হবে, চারপাশ থেকে পানি তুলে ফেলাতে ঢাকায় কিন্তু সেই পানি আর আসছে না।

 

ওয়াটার অ্যাক্টে পানি ব্যবহারের প্রায়োরিটি ঠিক করে দেওয়া হলেও প্রতিফলন হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু নিজেদের তৈরি করা অ্যাক্টগুলো ঠিক ভাবে প্রতিপালন করছি না। আমাদের কাছে প্রচুর ডেটা আছে, অ্যাক্ট আছে, পলিসি আছে, গাইডলাইন আছে। কিন্তু এগুলো ফাংশনাল কেন হচ্ছে না। ফাংশনাল কিন্তু করতে হবে। ওয়াটারের ক্ষেত্রে আমাদের ইন্ট্রিগ্রিটি ম্যানেমেন্টের দিকে আসতে হবে। পানির অপচয় রোধ করতে হবে। অপচয় রোধের মাধ্যমে সকলের পানির প্রাপ্যতা যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা করতে হবে।

 

প্রধান অতিথি বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, ঢাকার চারপাশে নদীগুলো, বুড়িগঙ্গার পানিকে এখনও পরিস্কার, বিশুদ্ধ করতে পারিনি। এসডিজি অর্জন করতে হলে একটি জেলাকে নিয়ে ভাবলে হবে না। ঢাকার পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় এখান থেকে পানি তোলাই কঠিন হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

 

তিনি বলেন, যে পানিটা মানুষ ব্যবহার করবে, সেটি যেন দূষণমুক্ত হয়। ইন্ড্রাস্ট্রিতে যে পানিগুলো ব্যবহার হয়, সেগুলো কিন্তু রিসাইকেল করা হয় না। করা হলে অনেকটা পানির সংকট সমাধান হতো। এজন্য আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

 

ডা. আজিজ বলেন, ঢাকায় পানির সমস্যা বেশি। চট্টগ্রাম, খুলনা ভালো করছে। যে মানুষকে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি, তিনি আমার-আপনার প্রতিবেশী। আমাদেরই কাছের মানুষ। এই বিবেচনায় সেবা প্রদানে আন্তরিকতা বজায় রাখতে পারি।

 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরামের সদস্য ও এনজিও ফোরামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএসও রশিদ, কাজী মনির মোশাররফ। অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, খুলনা ওয়াসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, রাজশাহী ওয়াসার ডেপুটি ম্যানেজার এসএম তুহিনুর আলম।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version