-->

আপাতত বাড়ছে না খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম

মো. রেজাউর রহিম
আপাতত বাড়ছে না খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম

মো. রেজাউর রহিম: দেশে জ্বালানী ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রায় সব পণ্যের দাম। এ অবস্থায় নতুন করে পাইকারি পর্যায়ে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে বিইআরসি। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

অন্যদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে আদৌ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কিনা, তা বিইআরসির ওপর নির্ভর করছে। গ্রাহক পর্যায়ে যাতে স্বস্তি থাকে, সেই বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব। এখন বিদ্যুতের যে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা গ্রাহক পর্যায়ে নয়।

 

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আবদুল জলিল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। পাইকারি পর্যায়ে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। নতুন দাম কার্যকর হওয়ার পর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের বর্তমান দাম ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা হবে। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বিপিডিবির আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল বিইআরসি।

 

তখন বিইআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তথ্যের অস্পষ্টতা, অসম্পূর্ণ আবেদন ও ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তি দামের প্রভাবের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য না থাকায় আবেদনটি খারিজ করা হয়। সেইসঙ্গে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিপিডিবি আপিল করতে পারবে বলেও জানায় কমিশন।

 

পরে ৩০ কর্মদিবস শেষে চলতি মাসের ১৩ তারিখে বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণের জন্য আবারো আবেদন জানায় বিপিডিবি। সে পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিইআরসি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।

 

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি এবং সামনে নির্বাচন এবং সাধারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয় বিবেচনা করে আপাতত খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। তবে শুধু বর্তমানে জ্বালানী-গ্যাস ও অর্থনৈতিক সংকট এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দাম সমন্বয় হচ্ছে। আর সার্বিক অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেড়েছে। যার প্রতিফলন হচ্ছে দামের ক্ষেত্রে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে আগে যে গ্যাস ৭ ডলারে কেনা যেত, এখন তা কিনতে ৩০ ডলার লাগছে।

 

অন্যদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং লোডশেডিংও বেশ কমেছে। তবে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের উচ্চমূল্য এবং মানুষের বিশেষ করে সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের সামর্থ্যরে বিষয় জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দেশে বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা। বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করে দেশের পাঁচটি কোম্পানি। এগুলো হলো ডেসকো, ডিপিডিসি, আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। এছাড়া বিপিডিবিও পাইকারির পাশাপাশি দেশের কিছু এলাকায় সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। আর বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে, ফলে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লেও বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর জন্য তা খুব একটা সমস্যা হবে না।

 

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে মাসে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম একসঙ্গে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর খুচরা পর্যায়ে দাম ৫ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অবশ্য গ্রাহককে এ দামের সঙ্গে ভ্যাট, সার্ভিস চার্জসহ আরো বাড়তি দাম পেিরশোধ করতে হচ্ছে।

 

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে বলেন, পাইকারি দাম বাড়ানোর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে কতটুকু প্রভাবে পড়বে, সে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। জ্বালানী তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দাম কিছুটা সমন্বয় করতে হচ্ছে।

 

এ দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা, সে বিষয়টি যাচাই করবে বিইআরসি। তবে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি গ্রাহক পর্যায়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানান তিনি।

 

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিইআরসি গ্রাহক নয়, জেনারেশন পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে। আর গ্রাহক পর্যায়ে দামের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। আমাদের এখানে জেনারেশন করতে (উৎপাদন) গিয়ে মূল্য বেড়েছে।

 

তিনি বলেন, তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয় করার জন্য বিইআরসি যাচাই-বছাই করে পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে যাতে স্বস্তি থাকে সেই বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।

 

উল্লেখ্য, গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। ওই সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮.৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫.৩ শতাংশ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version