-->

মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য দুই মাস

এম বদি-উজ-জামান:
মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য দুই মাস

এম বদি-উজ-জামান: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন শূন্য। গত প্রায় দুই মাস ধরে কমিশনের চেয়ারম্যান ও ছয়টি সদস্যপদ শূন্য রয়েছে। দেশের মানবাধিকার রক্ষায় একমাত্র জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ অন্য পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি সরকার। দীর্ঘদিন কমিশন শূন্য থাকায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিন কমিশন শূন্য্য থাকায় দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব দেখছেন তারা। কমিশনে দ্রুত নিয়োগের দাবি তাদের।

 

এদিকে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী কমিশনকেই আবার তিন বছরের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে রাজি না হওয়ায় কমিশনের জন্য নতুন মুখ খুঁজছে সরকার। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে কমিশনে ২২০টি অভিযোগ অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ৫১টি। এমনকি ইডেন মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি দায়িত্বে না থাকায় সেটা কমিশনের নজরে আসেনি বলে জানা গেছে। কার্যত কমিশনে চেয়ারম্যান ও সদস্য না থাকায় এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা যাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম ভোরের আকাশকে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অপরাপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। এটি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাই এ প্রতিষ্ঠান বেশিদিন শূন্য রাখা ঠিক নয়। দ্রুত কমিশনে চেয়ারম্যান ও অপরাপর সদস্যপদে নিয়োগ করা প্রয়োজন।

 

তিনি বলেন, আমাদের কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিষয়টি আইনমন্ত্রীকে জানানো হয়। আমরা থাকতে থাকতেই নতুন কমিশন নিয়োগের জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। এটা এখনো হয়নি। তিনি বলেন, ইডেন কলেজের ঘটনার পর আমাকে কেউ কেউ ফোন দিয়েছেন। বিষয়টি কমিশনকে তদন্ত করার অনুরোধ করেছেন। আমি তাদের বলেছি, আমি আর কমিশনে নেই। এখন বলুন, কমিশন যদি থাকত, তাহলে তো বিষয়টি অনুসন্ধান করতে পারত।

 

তিনি বলেন, এরকম অনেক ঘটনাই আছে, যা কমিশনের অনুসন্ধানের প্রয়োজন ছিল। কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু অনুসন্ধান হচ্ছে না। কারণ কমিশনে এখন যারা আছেন, তাদের অভিযোগ অনুসন্ধান করার এখতিয়ার নেই। কমিশনের অনুমোদনের পরই অনুসন্ধান করার সুযোগ আছে অপরাপর কর্মকর্তাদের।

 

তিনি আরো বলেন, আগে সরকারি কর্মকর্তারা কমিশনকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। আমার নেতৃত্বাধীন কমিশন বেশকিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। এখানে জেলা প্রশাসক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এসেছেন। বলতে গেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। মানবাধিকার কী, সে বিষয়ে মানুষকে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলা কমিশনের কাজ না। সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি।

 

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ভোরের আকাশকে বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সদস্যপদ শূন্য রাখা আইনসঙ্গত নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, স্যাংশন দিচ্ছে। এ মুহূর্তে মানবাধিকার কমিশনে পদ শূন্য রাখলে তারা (আন্তর্জাতিক সংস্থা) ভেবেই নেবে- মানবাধিকার কমিশন কাজ করুক এটা তারা (সরকার) চায় না।

 

মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব ভোরের আকাশকে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নিয়োগ না দিয়ে এতদিন ফেলে রাখা মানবাধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অবহেলার শামিল।

 

তিনি বলেন, কমিশনে নিয়োগ না দেয়াটা মানবাধিকারের প্রতি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনীহা স্পষ্ট। মানবাধিকারের একজন কর্মী হিসেবে অবিলম্বে নিয়োগের দাবি করছি। একইসঙ্গে কমিশনে এরকম শূন্য রাখার পুনরাবৃত্তি যাতে না, হয় সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৩ বছরের জন্য কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য ও পাঁচজন অবৈতনিক সদস্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সিনিয়র সচিব নাছিমা বেগমকে নিয়োগ দেয়া হয়। সার্বক্ষণিক সদস্যপদে নিয়োগ পান সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। আর অবৈতনিক সদস্যপদে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মিজানুর রহমান খান এবং সাবেক সচিব নমিতা হালদার। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version