-->
নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৭ শতাংশ, প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে

’২৪ সালে শেষ হবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ কাজ

মো. রেজাউর রহিম
’২৪ সালে শেষ হবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ কাজ

মো. রেজাউর রহিম: যমুনা নদীর ওপর সিরাজগঞ্জ-ভুয়াপুর পয়েন্টে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের আগস্টে সম্পন্ন হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অংশ হিসেবে এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে এ সেতু যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। ইতোমধ্যে এ সেতুর প্রায় ৪৭ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান সড়ক সেতু থেকে ৩০০ মিটার উজানে নির্মিতব্য দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এ সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ এবং খুলনা-কুষ্টিয়া-যশোর এলাকার প্রায় ২২টি জেলার ট্রেন চলাচল ও মালমাল পরিবহন অনেক সহজতর ও দ্রুতগতির হবে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি বিশেষ করে ভারত-ভুটান-নেপালের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে এই রেলসেতু।

 

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৩৬ শতাংশ। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এ সেতু নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা করছে।

 

জানা গেছে, নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে চালু হওয়ার পর থেকে প্রথম বছর চলাচল করা ট্রেনের গতিসীমা ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতির মধ্যে রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটারবিশিষ্ট এই রেলসেতুর দুপাশে ০ দশমিক ০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমবাঙ্কমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া রেলসেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রেললাইন, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশনও নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু ব্যবহার করে বর্তমানে প্রতিদিন ৪৮টি ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রেন চলাচলে সময়ও বেশি লাগছে। এ ছাড়া ঝুঁকি এড়াতে এ সেতু দিয়ে ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে দেশটি যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণের এ প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি হয়। এরপর ২০১৭ সালের মার্চে প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ হয় এবং ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সেতুর নকশা ও ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। পরে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। দেশের বৃহত্তম এ রেলসেতু নির্মাণে জাইকা সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে। তবে প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

 

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছে। জাইকা এ প্রকল্পে জাপানি মুদ্রা ইয়ানের মাধ্যমে অর্থায়ন করছে। সে জন্য চলমান ডলারের কোনো সংকট এ প্রকল্পে প্রভাব ফেলছে না। তিনি জানান, বর্তমানে প্রকল্পে ১ হাজার শ্রমিক নির্মাণ কাজে যুক্ত রয়েছে, এর মধ্যে ৩০০ বিদেশি শ্রমিক। সেতুর নির্মাণকাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, দেশের রেল ব্যবস্থা উন্নয়নের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের নেয়া একটি ভালো পদক্ষেপ এ রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প। ২০২৪ সালে এ সেতু চালু হলে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রাজধানীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহন অনেকাংশে সহজতর হবে। এ ছাড়া যাত্রী ও মালামাল পরিবহনও বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version