-->

১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানাবে বাংলাদেশ

মিশরে কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন শুরু

মো. রেজাউর রহিম
১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানাবে বাংলাদেশ

মো. রেজাউর রহিম: উত্তর আফ্রিকার দেশ মিশরে জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার মিশরের শার্ম আল শেখ নগরীতে ১৩ দিনব্যাপী কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। বিশে^র ১৯৮টি দেশের প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটের মুখে থাকা বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ক্ষতি মোকাবিলা এবং বিশ্বের র মানুষকে বসবাস-উপযোগী পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অথবা তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

 

সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংরাদেশ প্রাতনিধিদল অংশ নিচ্ছে। এছাড়া তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা।

 

জানা গেছে, বাংলাদেশ নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তির আওতায় প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার যে অঙ্গীকার করেছিল, তা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে। উন্নত দেশগুলো আগের অর্থায়ন কীভাবে পূরণ করবে এবং পরবর্তী সময়ে তারা টাকাটা কীভাবে দেবে বা তাদের অবস্থানের বিষয় আলোচনায় আনবে বাংলাদেশ। তবে সংকট সমাধানে শুধু ১০০ বিলিয়ন ডলার যথেষ্ট নয়। এছাড়া বর্তমান সংকটময় বৈশি^ক বাস্তবতায় ২০২৫ সালের পর এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কেও সম্মেলনে সুস্পষ্ট ঘোষণার দাবি জানানো হবে। পাশাপাশি ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ইস্যু নিয়েও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আেেলাচনা করা হবে।

 

এ ব্যাপারে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, কপ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তেনের পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াও লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানানো হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি, ঝড়, বন্যা, খরা এবং জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বের সমুদ্রতীরবর্তী বাস্তুচ্যুত এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়দায়িত্ব বহন করার জোরালো দাবি উত্থাপন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন ও প্রশমন এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরে উন্নত দেশগুলোর প্রতি দাবি জানানো হবে। আর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক গাইডলাইন থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। এছাড়া বিরূপ প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু বিমা চালু করার মতো প্রস্তাবও দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তননের জন্য দায়ী না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এদিকে বিশ্বে সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান এবং নাইজেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা, আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র খরা, এশিয়া ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক ঘূর্ণিঝড় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে মানুষ। আর এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতিও ব্যাপকহারে বাড়ছে। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’র সংক্ষিপ্ত রূপ ‘কপ’। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় কপের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

জানা গেছে, কপ-২৭ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তরেনর বিরূপ প্রভাব সংক্রান্ত রিপোর্টগুলোয় একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। কপ-২৭ সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃত্বকে অবশ্যই এ গুরুত্বপূর্ণ দশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের এ যুদ্ধে হয় আমরা জয়ী হব, নয়তো আমরা হেরে যাব। সুনির্দিষ্টভাবে এ লড়াইয়ে ১৯ শতকের শেষের দিকের স্তরের (১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমাবদ্ধ করতে হবে। এজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি দশকের শেষ নাগাদ কার্বন দূষণ আরো ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের উষ্ণতা ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আর প্যারিস চুক্তির অধীনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে রাখা এবং মানুষের বাসযোগ্য রাখা সম্বব হবে।

 

বিশ্লেষকদের মতে, এ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে তাদের আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, পৃথিবীর উষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পেলে তা মানুষের বসবাসের অযোগ্য একটি হটহাউসে রূপান্তরিত হতে পারে, যা মানবসভ্যতার জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version