-->
পুরান ঢাকার চমক ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় করে লয়ে যায়’

রাজধানীর পুরান ঢাকা যেন ইফতারির নগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর পুরান ঢাকা যেন ইফতারির নগরী

বছর ঘুরে আবার এসেছে রমজান। প্রতিটি মুসলমান পরিবারে ব্যস্ততা বেড়েছে। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের আবশ্যকতা যেমন রয়েছে, তেমনি তারাবির নামাজ, শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বাড়তি ব্যস্ততার মধ্যে পার করতে হচ্ছে। তবে সারাদিন রোজা শেষে পরিবারের সবাই মিলে একই সঙ্গে ইফতারির আনন্দটাই আলাদা। ইফতারির চাহিদার সঙ্গে রাজধানী যেন পরিণত হয়েছে ইফতারির নগরীতে।

 

দুপুর থেকে রাজধানীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা-অলিগলিতে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। যার শুরু হয়েছে শুক্রবার প্রথম রোজ থেকেই। চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত। রোজার প্রথম দিনে রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে পাড়া-মহল্লার টঙের দোকান পর্যন্ত সর্বত্র রয়েছে রকমারি ইফতারির আয়োজন। বাহারি ইফতারে সেজেছে প্রতিটি রেস্তোরাঁ।

 

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জুমার নামাজের পর থেকে নানা রকমের ইফতারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রয়েছে একাধিক পদের সব ইফতার। তবে দামের কারণে পছন্দের তালিকা থেকে অল্প অল্প করেই ইফতার কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের। প্রথম দিনের ইফতারিতে জিলাপি, সমুচা, পরোটা, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই এগুলোও বেশি কিনতে দেখা গেছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ইফতারির দাম একটু বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা।

 

এছাড়াও বাহারি ইফতার আয়োজনের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজু, হালিম, নানা ধরনের কাবাব, ছোলা-মুড়ি। এলাকাভেদে ইফতারির ধরন যেমন আলাদা, দামেও রয়েছে ভিন্নতা। নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তরা ফুটপাতে আয়োজিত ইফতারি পণ্যই বেশি কিনছেন। অন্যদিকে ধামন্ডি, গুলশান, বনানী এলাকায় রোজাদারদের ইফতারিতে বড়লোকিপনা রয়েছে যথেষ্ট। রোস্তোরাঁ মালিকরা এসব দিকে লক্ষ্য রেখেই সাজাচ্ছেন ইফতারির পসরা।

 

এদিকে প্রতিবারের মতো এবারো পুরান ঢাকার ইফতারিতে মোগল ঐতিহ্য বজায় রেখে সাজানো হয়েছে। কয়েকশ বছর ধরে ইফতারের এই ঐতিহ্য চলে আসছে পুরান ঢাকা চকবাজার এলাকায়। দুপুর হওয়ার আগে হাঁকডাক শুরু হয়ে যাচ্ছে। বড় বাপের পোলায় খায়. ঠোঙায় করে লয়ে যায়। শুক্রবার চকবাজার এলাকায় দেখা গেল হরেক রকম ইফতারসামগ্রী নিয়ে সাজিয়েছেন দোকানিরা।

 

এসব দোকানে ফালুদা, ফিরনি, লাবাং, মাঠা ও কলিজা ভুনাসহ মিলছে অজস্র ইফতারসামগ্রী। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ৭৮ বছর আগে শুরু হওয়া ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ এই বিশেষ খাবারের দোকান ঘিরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ খাবারের চাহিদা যেন বেড়েই চলছে। চকবাজারের শাহি জামে মসজিদের সামনের ঐতিহ্যবাহী এই ইফতারবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

 

গত বছর ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর তা ২০০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন, ১২টি পদ যেমনÑ কোয়েলের মাংস ও কলিজা, খাসির কলিজা, মগজ ও দেশি মুরগির ডিম ও মশলার সংমিশ্রণে তৈরি হয় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। সর্বনি¤œ ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ দরে বিক্রি হচ্ছে এই বিশেষ খাবার।

 

‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রেতা মাহমুদ হোসেন বলেন, গত বছর আমরা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এ বছর দাম ৮০০ টাকা। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাবারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম বাড়লেও বিক্রি কমেনি বলেও জানান তিনি। ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা শরীফ বলেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ একটি মুখরোচক খাবার। আমার পরিবারে মা-বাবা ও ভাইবোনসহ সবাই এই খাবারটি পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করার সময় এই খাবারটি রাখতেই হয়।

 

এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডির বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ইফতারি আইটেমের মধ্যে রয়েছে বিফ চাপ, খাসির গ্রিল চাপ, খাসির লেগ কাবাব, লেগ রোস্ট, খাসির হালিম, চিকেন ফুল রোস্ট, চিকেন সাসলিক, চিকেন চিজ বলসহ বিভিন্ন ধরনের আইটেম ১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

 

এদিকে সব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে যেসব ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে জালি কাবাব প্রতি পিস ২৫ টাকা, শামি কাবাব প্রতি পিস ২৫ টাকা, চিকেন ড্রাম স্টিক প্রতি পিস ৬৫ টাকা, চিকেন চিজ বল প্রতি পিস ৩০ টাকা, চিকেন চিজ রোল প্রতি পিস ৩৫ টাকা, চিকেন রোল প্রতি পিস ৩০ টাকা, চিকেন সমুচা প্রতি পিস ২০ টাকা, চিকেন পরোটা প্রতি পিস ৫০ টাকা, কিমা সমুচা প্রতি পিস ২০ টাকা, পনির সমুচা প্রতি পিস ২৫ টাকা,

 

পেঁয়াজু প্রতি পিস ৮ টাকা, আলুর চপ প্রতি পিস ৮ টাকা, বেগুনি প্রতি পিস ৮ টাকা, ভেজিটেবল রোল প্রতি পিস ২৫ টাকা, স্প্রিং রোল প্রতি পিস ২৫ টাকা, চাইনিজ রোল প্রতি পিস ২৫ টাকা, চিকেন কাটলেট প্রতি পিস ৬০ টাকা, কিমা পরোটা প্রতি পিস ৫৫ টাকা, টানা পরোটা প্রতি পিস ৩৫ টাকা, বাটার পরোটা প্রতি পিস ৫৫ টাকা, জিলাপি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রেশমি জিলাপি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, লাবাং লিটার ২০০ টাকা।

 

 

মন্তব্য

Beta version