-->

ব‍্যবসার সফলতার জন্য মাথায় রেখেছি সততা

ইসমত জেরিন স্মিতা
ব‍্যবসার সফলতার জন্য মাথায় রেখেছি সততা
ফাহিমা সুলতানা পারভীন

আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক সূচক বা অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষেন মন মানসিকতারও উন্নয়ন হয়েছে। মেয়েদেকে এগিয়ে যেতে এখন আর অতো বেশি বাধাগ্রস্ত হতে হয় না বা অন্য কারো কথা শুনতে হয় না। হস্ত-কুটির শিল্প, বুটিকস, ফ্যাশন কিংবা রন্ধন। সবক্ষেত্রে এগিয়ে নারীরা। আজ জানবো তেমনি একজন ‍উদ্যোক্তার কথা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- সোনিয়া সিমরার।

 

আপনার বেড়ে উঠা বা শৈশব নিয়ে বলুন :

ফাহিমা সুলতানা পারভীন: ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য। প্রথমে আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি আমি ফাহিমা সুলতানা পারভীন (শিউলী)।। মনে করিয়ে দিলেন সুন্দর একটা স্মৃতিতে।। আমার জন্ম সাভারে, যেখানে গ্রামের নির্মল পরিবেশ আর শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। সাত ভাই- বোনের মধ্যে আমার পজিশন ছিল মাঝামাঝি ।

সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। একটা গন্ডির মধ্যে থাকতে কখনও ভালো লাগতো না । আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে করতো অজানাকে জানতে, অদেখাকে দেখতে।। বাবা- মা সবসময়ই আমাদের ভালো লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করে গিয়েছেন।। ছোটবেলা বন্ধু - বান্ধব বলতেই ছিল ভাই-বোন। ঘোরাফেরা, ঝগড়া-ঝাটি, খেলাধুলা সব ছিল একটা বাউন্ডারির মধ্যে।। একটা সুন্দর নিয়মকানুনের মধ্যে বড় হয়েছি।

একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে যতটুকু সচ্ছলতা দেয়া যায় তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছেন।।বাবা-মা আদর করে শিউলি ডাকতেন। বাবা তার সবটুকু উজার করে দিয়েছেন আমাদের জন্য । তাইতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাইকে মাস্টারস করাতে সক্ষম হয়েছেন।

ছোটবেলায় খুবই দুষ্ট বা খুবই শান্ত কোনটাই ছিলাম না। বাবা- মা কষ্ট পায় এমন কিছু করতাম না। তারা আমাদের মুরগির বাচ্চার মতো আগলে রেখেছেন, অনেক কিছু বির্সজন দিয়েছে আমাদের জন্য তাই তাদের ব‍্যাপার আমরা সবাই বুঝতাম। খুব সুন্দর কাটিয়েছি শৈশব।

 

পড়ালেখা কোন বিষয়ে, কোথায় করেছেন :

ফাহিমা সুলতানা পারভীন: আমি ফাহিমা এস এস সি, এইচ এস সি মানবিক শাখায় পড়ালেখা করে মাস্টার'স করেছি ভূগোল বিভাগ ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

 

ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য কি ছিলো :

ফাহিমা সুলতানা পারভীন: আমার লক্ষ্যে ছিল একেক সময় একেকটা। নিদিষ্ট কোন লক্ষ্যে ছিল না। কখনও ব‍্যাংকার, কখনও বিমান বালা, কখনও পুলিশ ইত্যাদি। হাইট ভালো থাকায় অনেকেই বলতো আর্মিতে যোগদান করতে, সেটাও ইচ্ছে করতো। শিক্ষকতাও ভালো লাগতো সেটি হতেও পেরেছি। সংসপ্তক স্কুল এবং কলেজে শিক্ষকতা করেছি।। উদ‍্যোক্তা হবো সেটি কখনও কল্পনা করিনি আজকে সেটাই হলাম যাক নিজের একটা পরিচয় তো হলো।

 

আপনার ব্যবসার শুরুটা কিভাবে হলো, পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছেন কি:

ফাহিমা সুলতানা পারভীন:  কোন কিছু শুরুর দিকটা ভালো হয় না আমার মতে। সবসময়ই চাইতাম নিজের একটা পরিচয়। কারও কাছে হাত পেতে টাকা চাইতে ইচ্ছে করতো না। একটা মেয়ের ভিত্তি সবসময়ই মজবুত রাখা উচিত তা না হলে পদে পদে হোচটঁ খেতে হয়। নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে পারে না। ছোট্ট একটা জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়।

২০২০ সালে যখন সারাবিশ্ব স্তম্ভ করোনা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে তখন পুরো বিশ্ব ঘর বন্দি। অনেকের চাকরি চলে যায়, কাজের জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আমরাও ঘর বন্দি হয়ে যাই। Husband এর চাকরিও মনে হচ্ছিল যাই যাই। স্পেশাল বাচ্চার স্কুল বন্ধ, থেরাপি বন্ধ সব থেকে যায়। ঘরের মধ্যে এমন পরিস্থিতি ভালো লাগছিল না।

 

হতাশ জীবন, এমনিতেই হতাশ ছিলাম আমার স্পেশাল জিরো লেভেলের বাচ্চাকে নিয়ে। ৮- ৯ বছর নিজের কথা, জীবন কি তার মানেই খুজে পেতাম না।স্বামী, সংসার আর সন্তান ছিল সব কিছু।। এমন জীবনে আর থাকতে ভালো লাগছিল না মানসিক, শারীরিক অসুস্থ হয়ে যাই। সবসময়ই কান্না করতাম আল্লাহ কোন পাপের প্রাঃয়শ্চিত আমাকে দিচ্ছে। প্রায় সময় মৃত্যু কামনা করতাম। কথাগুলো কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করতাম।

 

তারা পরামর্শ দিলো কিছু একটা নিয়ে ব‍্যস্ত থাকার জন্য। চিন্তা করি কি নিয়ে ব‍্যস্ত থাকা যায় তখনই আইডিয়া আসে অনলাইনে কিছু করার। ৬,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করি আমার ব‍্যবসা। এ টাকা রাইয়ানের থেরাপির জন্য আমার পরিবার যে টাকা দিতো তার থেকে কিছু টাকা বাচিয়ে শুরু করা।। প্রথমে কেউই সাপোর্ট করেনি।।

 

সবাই বাধা দিয়েছে। বলেছে আমার সন্তান কে নিয়ে আমি পারবো না। কিন্তু সবাইকে আমি পেরে দেখিয়েছি মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে। তার জন্য দরকার মনের জোর, ধৈর্য্য ও পরিশ্রম।। প্রতি নিয়ত আমাকে স্ট‍্রাগল করতে হয়েছে অনেক বাধার সম্মূখীন হয়েছি। বিছানার চাদর নিয়ে শুরু করি।

আমার প্রোডাক্ট বটি দিয়ে কেটে নষ্ট করা হয়েছে। তবুও থেমে থাকিনি, কিছু করে বাচাঁর একটা অবলম্বন চেয়েছি, নিজের একটা অস্তিত্ব খোজেঁছি।প্রথমে কিছুই বুঝতাম অনলাইনে ব‍্যবসার ক্ষেত্রে পড়াশুনা এবং নিজেই চেষ্টা করে একা একা শিখে নিয়েছি।

 

আমাকে এই শিখানোর ক্ষেএে অনেকটাই সহযোগিতা করেছে ""উই "" নামে আমার প্রিয় গ্রুপ টি। যার কাছে আমি যতদিন বেচে থাকবো কৃতজ্ঞতা থাকবে। স্পেশাল কৃতজ্ঞতা থাকবে নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং রাজীব আহমেদ স‍্যার।

প্রথম দিকে পরিবারের সাপোর্ট না পেলেও পরে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্।। ম‍্যামো বই, ভিজিটিং কার্ড, ব‍্যাগ ইত্যাদি তৈরী করতে সহযোগিতা করেছে পরিবার।। বাসার গৃহকর্মী এবং দারোয়ান ও অনেক সহযোগিতা করেছে ডেলিভারি এবং বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে। সবাইকে নিয়ে এখন আমার পথ চলা।

 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 

ফাহিমা সুলতানা পারভীন:  আমি নিজের পরিচয় তৈরী করতে পেরেছি।এখন ফাহিমা সুলতানা কে অনেকেই চেনে। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে Raiyan's varieties collection এর একটা শোরুম হবে। ব‍্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাবে। দেশ ছেড়ে বিদেশে এর প্রোডাক্ট খ‍্যাতি পাবে।। রাইয়ানকে নিয়ে সবাই গর্বিত হবে তার পরিচয় দিয়ে। তারমতো বাচ্চাদের কেউ অবহেলা না করে কাছে টানবে।

 

অন্যদের জন্য আপনার পরামর্শ দিন 

ফাহিমা সুলতানা পারভীন: আমি যেমন আমার নাম প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি প্রত‍্যক নারী তার, শুধু মাত্র তার নাম প্রতিষ্টিত করতে পারে, স্বনির্ভর হতে পারে।ভালো এবং দেশীয় পণ্য কিনে হোন ধন‍্য। সবাই বিদেশী প্রোডাক্ট না কিনে আমাদের দেশীয় পণ্য কিনবেন। দেশের মেধা দেশের জন্য কাজে লাগান।

প্রত‍্যেক নারী স্বনির্ভর হোন। ভিত্তি মজবুত করুন। দয়া নয় ভালোবাসা অর্জন করুন। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের যত্ন নিন। আপনি ভালো থাকলে ভালো থাকবে সংসার, সন্তান সবকিছু।। ধন্যবাদ সবাইকে

মন্তব্য

Beta version