-->

রূপচর্চায় নারিকেল তেল

ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন
রূপচর্চায় নারিকেল তেল

মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত পুরো শরীরে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অংশে যে উপাদানটি বেশ উপকার করে, তা হলো নারিকেল তেল। এক্সট্রা ভার্জিন, আনরিফাইনড নারিকেল তেল খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এতে আছে প্রচুর পরিমাণের এসেনশিয়াল ফ্যাট, যাকে আমরা বলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট।

নারিকেল তেলে আছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা আমাদের সুস্থ রাখে এবং সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এ জন্য অন্যান্য তেলের তুলনায় খাদ্য হিসেবে নারিকেল তেলের অবস্থান শীর্ষে। নারিকেল তেল বেশ সহজলভ্য এবং এটি হাতের কাছেই পাওয়া যায়।

তাই যুগ যুগ ধরে এটি রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ, ভারত এসব দেশে নারিকেল তেল খুব সহজলভ্য বলে প্রাচীনকাল থেকে এই তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। ইদানীং নানা ধরনের শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ময়েশ্চারাইজার, শাওয়ার জেল, সাবান, লিপবাম এবং অনেক ধরনের কসমেটিকস, মাউথ ফ্রেশনারেও নারিকেল তেলের ব্যবহার করা হয়।

চুলের যত্নে

নারিকেল তেলে আছে লরিক অ্যাসিড, ক্যাপরিক অ্যাসিড, ক্যাপলিক অ্যাসিড, মিসটেরিক অ্যাসিড, যা আমাদের চুলে পুষ্টি জোগায়। সে কারণে এই তেল মাথার ত্বকে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পুষ্টি চুলের গোড়ায় গোড়ায় পৌঁছে যায়। এই তেল মাথায় মাখার মাধ্যমে মাথার ত্বক সুস্থ ও আর্দ্র থাকে। ফলে চুলের গোড়া মজবুত থাকে। চুলের জন্য এটি আদর্শ ময়েশ্চারাইজার।

গোসলের আগে ম্যাসাজের মাধ্যমে, গোসলের সময় শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের উপাদান হিসেবে এবং গোসলের পরে হেয়ার সিরামের উপাদান হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যায়।

যাঁদের মাথার গোড়ায় ফুসকুড়ি বা দানা থাকে কিংবা যাঁদের মাথার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাঁরা মাথার ত্বকে নারিকেল তেল না মেখে চুলে মাখতে পারেন। গোসলের কিছুক্ষণ আগে চুলে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করলে চুলের কিউটিকেল সুরক্ষিত থাকবে। যাঁদের মাথায় খুব খুশকি হয়, যাঁদের মাথার ত্বক শুষ্ক এবং যাঁদের সোরিয়াসিস আছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে টনিক হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

যাঁদের মুখে ব্রণ কিংবা মাথার ত্বকে দানা আছে, তাঁরা সারা রাত মাথায় নারিকেল তেল দিয়ে রাখবেন না। যাঁদের ত্বক শুষ্ক ও সোরিয়াসিস আছে, তাঁরা সারা রাত নারিকেল তেল মাথায় দিয়ে রাখতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শে।

ত্বকের যত্নে

লিপবাম হিসেবে নারিকেল তেলের জুড়ি নেই। শীতকালে ভার্জিন নারিকেল তেল পেট্রোলিয়াম জেলির মতো ঘন থাকে। সুতরাং এটি সুন্দরভাবে ঠোঁটে ব্যবহার করা যায়। যাঁদের সারা বছর ঠোঁট শুষ্ক থাকে তাঁরা সব সময় ঠোঁটে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেলের সঙ্গে চিনি, মধু ও কফি মিশিয়ে ঠোঁটে স্ক্রাব করলে ঠোঁট সতেজ থাকবে।

সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার পর ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নখে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে নখের কিউটিক্যাল ভালো থাকবে। নখ সহজে ভেঙে যাবে না। শীতকালে পায়ের গোড়ালি ফাটা সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকে সারা বছর এ সমস্যায় ভোগেন। সে ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিতে সোপ ফ্রি ক্লিনজার ও কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে পা ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিন।

পা মুছে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন। এরপর শীতকালে নরম সুতার মোজা পরে থাকতে পারেন। অন্যান্য সময়ে শুধু নারিকেল তেল ম্যাসাজ করে ঘুমালে পা ফাটার সমস্যা থাকবে না। নারিকেল তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে। আর তাই ইদানীং ওরাল মাউথওয়াশে নারিকেল তেল ব্যবহার করা হচ্ছে।

বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও এটি নিরাপদ। যাঁদের শরীরে একজিমা ও সোরিয়াসিস আছে, তাঁদের শীতকালে চিকিৎসকেরা নারিকেল তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

সাবধানতা

কিছু নিয়ম

নারিকেল তেল উপকারী হলেও এই তেল ব্যবহারে কিছু নিয়ম মানতে হবে। নারিকেল তেল সব ত্বকের জন্য নিরাপদ হলেও এর ব্যবহারে কারও কারও ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, যাঁদের ব্রণ হয় তাঁরা মুখে নারিকেল তেল ব্যবহার করবেন না।

এতে পোর বন্ধ হয়ে যায়। ত্বকের তেল নিঃসরণ বেড়ে গিয়ে ব্রণ হয়। পরে ক্ষত দেখা দেয়। যাঁদের ত্বক খুব শুষ্ক তাঁরা মেকআপ রিমুভার হিসেবে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। এখন বাজারে নারিকেল তেল যুক্ত মেকআপ রিমুভার পাওয়া যায়। গলার কিংবা হাঁটুর ভাঁজে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে ঘেমে গিয়ে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে।

লেখক: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, শিওর সেল মেডিকেল বাংলাদেশ

মন্তব্য

Beta version