বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান-বাবরসহ সব আসামি খালাস
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে আদালত সবাইকে বেকসুর খালাস দেন।
ঘটনার পটভূমি: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা করা হয়।
বিচার প্রক্রিয়া: ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে।
হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানির পর রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, মামলার সাক্ষীদের বয়ানে অসংগতি এবং প্রমাণের ঘাটতি রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি ছিল যে আসামিদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে আদালত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন যে সাক্ষ্য ও প্রমাণে কোনো নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায়নি।
রায়ের পর্যবেক্ষণ: আদালত বলেন, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণের ঘাটতি এবং অনেক সাক্ষীর টর্চারের মাধ্যমে নেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে মামলার সকল আসামি, যারা আপিল করেছেন এবং যারা করেননি, সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া: রায় ঘোষণার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করছেন।
প্রতিরোধহীন হামলা ও রাজনৈতিক বিতর্ক: ২১ আগস্টের হামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার একটি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে আসলেও তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের দাবিতে ২০০৯ সালে মামলাটির পুনঃতদন্ত শুরু হলে নতুন করে আরও আসামি যুক্ত করা হয়।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: মোট ৫২ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু এবং আরও ১৭ জন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৯ জন ছিলেন। তবে হাইকোর্টের রায়ে সবাই খালাস পেয়ে যায়।
অপরাধের বিচার ও ভবিষ্যৎ: এ রায় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এ রায়ের ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে, অন্যদিকে বিএনপি নেতারা একে ন্যায়বিচারের উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য