-->
হাইকোর্টে আবেদন খারিজ

প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা কর পরিশাধ করতেই হচ্ছে ইউনূসকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা কর পরিশাধ করতেই হচ্ছে ইউনূসকে

শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে দান করা ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকার বিপরিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জরিমানাসহ ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৬ টাকা দানকর দাবি বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দানকর পরিশোধে এনবিআরের দেয়া নোটিশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আবেদন (রেফারেন্স) খারিজ করে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

হাইকোর্ট বলেছেন, মৃত্যুচিন্তা এবং পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের কথা বলে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে টাকা দান করার দাবির সপক্ষে আইনি প্রমানাদি নেই। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতেই ড. ইউনূস ট্রাস্টে টাকা দান করেছেন বলে প্রতিয়মান হয়।

 

বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দিয়েছেন। ফলে এনবিআরের দাবি করা দানকর বাবদ ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৬ টাকা(জরিমানাসহ) সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হচ্ছে ড. ইউনূসকে। যদিও এরইমধ্যে তিন কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৮ টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। একারণে তাকে বাকী ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৬ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

 

আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান খান, সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ ও সুমন সেনগুপ্ত। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা রহমান শম্পা।

 

রায়ের পর ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেছেন, এখন ড. ইউনুস দানকর পরিশোধ করবেন নাকি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন, সেবিষয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, আয়কর পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে টাকা দান করেছেন। একারণে তাকে কর বাবদ টাকা পরিশোধে নোটিশ দেয় এনবিআর। এই নোটিশের বিরুদ্ধে ইউনুসের করা মামলা খারিজ করে দেয় ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্ট ওই রায় বহাল রেখে বলেছেন, ট্রাইবু্যুনালের আদেশে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং খারিজ করে সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ফলে পরিশোধের টাকা বাদ দিয়ে আরোপ করা দান করের বাকি টাকা তাকে পরিশোধ করতেই হবে।

 

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ড. ইউনূস ২০১১-১২ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, ২০১২-১৩ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দান করেন। এর বিপরিতে এনবিআর ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮শ টাকা, এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে পৃথক তিনটি নোটিশ দেয় এনবিআর। এরসঙ্গে ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানাও করা হয়। সবমিলে মোট ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬ টাকা দাবি করে এনবিআর।

 

এই নোটিশের বিরুদ্ধে প্রথমে অ্যাপিলেট যুগ্ম কর কমিশনারের কাছে পৃথক তিনটি আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার দাবি, তিনি মৃত্যুচিন্তা ও নিকট আত্মীয়দের কল্যাণের কথা ভেবে ট্রাস্টে দান করেছেন। ফলে তিনি দানকর আইন, ১৯৯০-এর ৪ ধারার (ছ)(জ) উপধারা অনুযায়ী কর অব্যাহতি পাবেন।

 

বিপরিতে এনবিআরের দাবি, তিনি নিজেই ট্রাস্টগুলোর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি। দানকর আইন, ১৯৯০-এর ৪ ধারার (ছ) উপধারায় বলা আছে, কেউ গুরুতর আহত হয়ে বা অসুখে মৃত্যুশয্যায় থাকলে তার অর্থ-সম্পদ নিকট আত্মীয়দের দান করা যায়। একে মৃত্যুচিন্তায় দান বলা হয়। কিন্তু ড. ইউনূস দানের সময় তেমন কোনো পরিস্থিতিতে ছিলেন না বা এখনো নেই। ফলে মৃত্যুচিন্তা থেকে তিনি দান করেছেন-এই যুক্তি অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া দানকর আইন অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের দানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দান যদি পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, আপন ভাই অথবা আপন বোনকে করা হয় তবে করদাতা কর অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু ড. ইউনূস দান করেছেন ট্রাস্টে। এর মধ্যে ইউনূস সেন্টারের তিনজন ট্রাস্টির মধ্যে একজন ট্রাস্টি দাতা নিজে। আরেকজন ড. ইউনূসের আপন ভাই। আবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট ও ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা করদাতার নিকট আত্মীয় নন। ফলে এ ক্ষেত্রে তিনি কর অব্যাহতি পেতে পারেন না। ফলে করদাতার দান করা অর্থ দনকর আইনের ৪(ছ) (জ) ধারায় দানকর মুক্ত নয়।

 

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন ইউনূস। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর ইউনূস হাইকোর্টে পৃথক তিনটি আবেদন (রেফারেন্স) করেন। ২০১৫ সালে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ত খারিজ করে গতকাল রায় দিলেন হাইকোর্ট।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version