-->

যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্পের নথি হাইকোর্টে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক
যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্পের নথি হাইকোর্টে তলব

যমুনা নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে ছোট করতে প্রস্তাবিত প্রকল্পের নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি হাইকোর্টে দাখিল করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ১১ জুন পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

 

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দিয়েছেন। পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেয়া হয়েছে।

 

রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

 

‘যমুনা নদীকে ছোট করার চিন্তা’ শিরোনামে গত ১২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে এই রিট আবেদন দাখিল করা হয়। ওই রিট আবেদনে প্রকল্প প্রনয়নের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

 

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে নদী বা খাল দখল করে কিছু করা যাবে না।

 

এছাড়া জলাধার আইনেও বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব তোয়াক্কা না করে নদী ভরাট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যমুনা নদী প্রতি বছর বড় হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় নদীটি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হয়ে যায়। এত বড় নদীর প্রয়োজন নেই। তাই এটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের অন্যতম উৎস যমুনাকে ছোট করার এমন আইডিয়া এসেছে খোদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের মাথা থেকে।

 

এজন্য তারা ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করেছেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যখন বারবার ব্যয় সংকোচনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, সে সময় মন্ত্রণালয়টি এমন প্রকল্প নিয়েছে কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই। বিশেষজ্ঞরা বিরল এ প্রকল্পকে অবাস্তব বলছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী ছোট করতে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাংলাদেশ তো বটেই-পৃথিবীর কোনো দেশেই আগে প্রয়োগের নজির নেই। এ কারণে প্রকল্পটি নিয়ে খোদ সরকারের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে।

 

সংশ্লিষ্টদের একটি পক্ষ বলছে, কোনো ধরনের জরিপ ছাড়া ঋণের টাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

 

প্রকল্পের বিরোধিতা করে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না, এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে বন্যা প্লাবনের ঝুঁকি। পাশাপাশি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশের অন্যতম স্থাপনা পদ্মা সেতু এবং যমুনা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

সম্প্রতি যমুনা নদীর প্রশস্ততা কমাতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের ওপর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়।

 

কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা পিইসি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 

সেই সভায় এ ধরনের আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। সভায় এই প্রকল্পে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version