-->
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

অভিযোগের পাহাড়, তদন্তে হিমশিম

এম বদি-উজ-জামান
অভিযোগের পাহাড়, তদন্তে হিমশিম

এম বদি-উজ-জামান: স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পার হলো। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে আসতে শুরু করে অভিযোগ আর অভিযোগ।

 

গত ১৩ বছরে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা পড়েছে ৭৮৭টি। এর মধ্যে ৮৮টি অভিযোগের তদন্ত শেষে মামলায় পরিণত হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে ১৭টিতে। অভিযোগের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে নথিভুক্ত করা হয়েছে ১৪৯টি মামলা।

 

আর ২ হাজার ৮০৫ জনের বিরুদ্ধে ৪৭১টি অভিযোগ এখনো জমা আছে ট্রাইব্যুনালে। ফলে এই বিপুল সংখ্যক অভিযোগের তদন্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে তদন্ত সংস্থা। এমন অবস্থায় আগামী ৬ মাস আর নতুন কোনো অভিযোগ জমা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১২ সালে সরকার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করে। ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ২০১৩ সাল থেকে একে একে রায় আসা শুরু হয়। এরপর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে মোট ৫১টি মামলায় রায় ঘোষিত হয়েছে।

 

প্রথম তিন বছর অর্থাৎ ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় হয়েছে ২১টির। এর মধ্যে এক নম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে ১০টি এবং দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় দেয় ১১টি মামলায়। ২০১২ সালের ২২ মার্চ দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল অকার্যকর হয়ে পড়ে।

 

সেই থেকে একটি ট্রাইব্যুনালেই বিচার হচ্ছে। এ অবস্থায় ২৫ মার্চ পর্যন্ত এই ১৩ বছরে মাত্র ৫১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই ৫১ মামলায় ১৫১ আসামির মধ্যে সাজা হয়েছে ১৩১ জনের। এর মধ্যে ৯১ জনের মৃত্যুদন্ড হয়েছে। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে ৩৫টি মামলা বিচারাধীন। তবে ২০১৭ সালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৮টি। ফলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

 

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক ভোরের আকাশকে বলেন, এ পর্যন্ত যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে তা আশারনুরূপই বলা যায়। কারণ ৫০ বছর আগের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে ৪০ বছর পর। ২০১০ সালে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমাদের কাছে যে পরিমাণ অভিযোগ জমা হয়েছে তার সব তদন্ত সম্পন্ন করতে পারিনি ঠিক, তবে এ পর্যায়ে এসে যে মানের তদন্ত হয়েছে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

 

অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা গেছে। এটাই আমাদের সন্তুষ্টির জায়গা। তিনি বলেন, করোনার কারণে দুবছর ঠিকমতো তদন্ত ও বিচার কাজ করা যায়নি। ফলে তদন্তাধীন অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে।

 

ওই দুই বছর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিচার হওয়া মামলার সংখ্যা বাড়ত। তিনি ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর অভিমত দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখন যাদের বিচার হচ্ছে তারা মাঠ পর্যায়ের হলেও তারাই ছিল হিংস্র। তারা সরাসরি মানুষকে হত্যা করেছে। ফলে তাদের বিচার সম্পন্ন হওয়া দরকার। এজন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

 

ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ ট্রাইব্যুনালে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার শুরু হলেও প্রথম রায় হয়েছে ফরিদপুরের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়।

 

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ১৫১ আসামির বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচার শেষে নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী, মীর কাশেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে।

 

আর গোলাম আযম, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারসহ কয়েকজন আসামি কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।

 

বিচারের ক্ষেত্রে মামলার পরিসংখ্যানে কম সংখ্যক হলেও এ সময়ের মধ্যে প্রধান প্রধান অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন হওয়াতেই সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বিশেষ করে প্রধান ৬ আসামির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বেজায় খুশি সংশ্লিষ্টরা। এখন চলছে মাঠ পর্যায়ের আসামিদের বিচার কাজ।

 

ফলে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ কমেছে অনেক গুণ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version