-->
১৬ বছর পর নতুন উদ্যোগ

সাক্ষীদের ভাতার ব্যবস্থা করতে সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি

এম বদি-উজ-জামান
সাক্ষীদের ভাতার ব্যবস্থা করতে সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি

এম বদি-উজ-জামান: দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী হিসেবে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষ্যভাতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা এ ভাতা চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সম্প্রতি সরকার তথা আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

চিঠিতে ভাতা দিতে নতুন অর্থনৈতিক কোড/খাত সৃষ্টি করা এবং এ খাতে অর্থ বরাদ্দে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিয়ার রহমানের স্বাক্ষরে সম্প্রতি এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান শনিবার ভোরের আকাশকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৪ ধারায় সাক্ষীদের খরচ দেয়ার বিধান রয়েছে। আগে দায়রা আদালত ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে সাক্ষীর খরচ বাবদ সরকার প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করত এবং সাক্ষীদের তা দেয়া হতো। কিন্তু অনেক দিন তা বন্ধ রয়েছে।

 

এ কারণে তাদের ভাতা দিতে আর্থিক খাত সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার সুসংহত করার লক্ষ্যে আদালতে বিচারাধীন মামলায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও পাবলিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে উৎসাহিত করতেই এ উদ্যোগ।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী অবসরে যাওয়া পুলিশ, চিকিৎসকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাক্ষ্যভাতা দেয়া হতো। কার্যবিধির ৫৪৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরকার প্রণীত যেকোনো বিধিসাপেক্ষে যেকোনো ফৌজদারি আদালত উপযুক্ত মনে করলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত, বিচার বা অন্যান্য কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে উপস্থিত থাকা কোনো অভিযোগকারী বা সাক্ষীর যুক্তিসংগত খরচের জন্য অর্থ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন।

 

এই বিধানের আলোকেই সাক্ষীদের ভাতা দিয়ে আসছিলেন নিম্ন আদালত। কিন্তু এমন কোনো অর্থনৈতিক খাত (কোড) না থাকায় তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৬ সাল থেকে বাদী ও সাক্ষীদের খরচ (ভাতা) দেয়া বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষীদের খরচ বাবদ জেলা ও দায়রা জজ এবং সংশ্লিষ্ট আদালত-ট্রাইব্যুনাল, যাদের নিজস্ব বাজেট ব্যবস্থাপনা আছে, তাদের সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হলে ওই সমস্যার সমাধান হবে।

 

জানা যায়, পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ মিলনায়তনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা হয়। সভায় পুলিশসহ অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষ্যভাতা প্রদানের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। এর পরই প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় ভাতা দেয়ার নিয়ম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

এরই অংশ হিসেবে গত ৩১ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি মামলায় সরকারি সাক্ষীদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও অন্যান্য সরকারি সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা (টিএডিএ) না পাওয়ায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসতে আগ্রহী হন না।

 

ফলে তাদের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আনয়ন করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার সুসংহত করার লক্ষ্যে আদালতে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে উপস্থিত করণার্থে তাদের যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা (টিএডিএ) প্রদান করা আবশ্যক।’

 

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে দায়রা আদালত ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে সাক্ষীর খরচের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করত এবং তৎমতে সাক্ষীদের তা প্রদান করা হতো। বর্তমানে এ রকম কোনো অর্থনৈতিক (কোড) না থাকায় তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বর্ণিতাবস্থায়, আদালত/ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাক্ষীর যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা (টিএডিএ) প্রদানের আদেশ প্রদান করা হলে সেই আদালত অথবা তার ঊর্ধ্বতন যে আদালতে সাক্ষীদের ভাতার জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রদান করা হবে, সেই আদালত/ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট হিসাব শাখা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণকারী আদালতের আদেশ/সার্টিফিকেটের কপি জমা প্রদান সাপেক্ষে সাক্ষী যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা (টিএডিএ) উত্তোলন করতে পারবেন।

 

সেক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ যেসব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব বাজেট বরাদ্দ আছে, সেসব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বাজেটে সরকার কর্তৃক সাক্ষীদের খরচ বাবদ প্রয়োজনীয় নতুন অর্থনৈতিক কোড/খাত সৃজন করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই কোর্ট পরামর্শ প্রদান করেছে।

 

এ অবস্থায় The Code of Criminal Procedure এর ৫৪৪ ধারার আলোকে অধঃস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালগুলোতে ফৌজদারি মামলায় সরকারি সাক্ষীদের সাক্ষ্যভাতা প্রদানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক কোড/খাত সৃজন এবং খাতে অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version