-->
ইজারাদারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

খুলনার দিঘলিয়া হাটের সরকারি ইট বিক্রি

খুলনা ব্যুরো
খুলনার দিঘলিয়া হাটের সরকারি ইট বিক্রি

ইজারাদার কর্তৃক সলিংয়ের (মাটিতে বিছানো) বিপুল পরিমাণ সরকারি ইট তুলে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের কোলাহাটের ইজারাদারসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিঘলিয়া থানার এসআই সুব্রত বিশ্বাস সম্প্রতি খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২নং আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।

 

চার্জশিটভুক্তরা হচ্ছেন, কোলাহাট ও বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কেটলা গ্রামের গাজী মোল্লার পুত্র জাকির মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ও হাটের ইজারাদার একই গ্রামের আব্দুল গফ্ফার শেখের পুত্র বুলু শেখ, কমিটির সহসভাপতি ও একই গ্রামের মকিম মোল্লার পুত্র মাসুদ মোল্লা এবং মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মওলার পুত্র মুকুল মোল্লা।

 

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো. বুলু শেখসহ অন্যান্য আসামিরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে তাদের অগোচরে হাটের মাটির নিচ থেকে ইট উত্তোলন করতে থাকে। আসামিরা হাট থেকে ২২ হাজার ইট উত্তোলন করে। স্থানীয়রা ওই ইট অবৈধভাবে উত্তোলনের বিষয়ে অবগত ছিল না। আসামিরা উত্তোলনকৃত ইট বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

 

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, এ সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে ওই কোলাহাটের পুরোনো ইটের অস্তিত্ব পান। যার বেশিরভাগ ইট বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে বলে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি বাড়ির উঠান থেকে ২৬শ’ ইট জব্দ করা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিরা চোরাইকৃত ওই ইটের বিষয়ে না জেনে ক্রয় করেন এবং আসামিরা বিষয়টি গোপন করে বিক্রি করে বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।

 

এর আগে ইজারাদার কর্তৃক খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের কোলাহাটের সলিংয়ের (মাটিতে বিছানো) বিপুল পরিমাণ সরকারি ইট তুলে বিক্রির অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেনহাটি ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) স্বপন কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় মামলা করেন।

 

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কোলাহাট ও বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাকির মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ও হাটের ইজারাদার বুলু শেখ, কমিটির সহসভাপতি মাসুদ মোল্লা ও মুকুল মোল্লা গত ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট কোলাহাটের চান্দিনার সলিং থেকে সরকারি ইট তুলে আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ এনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার কামরুজ্জামান জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

 

যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কর্তৃক ১ সেপ্টেম্বরের অফিস আদেশে উল্লিখিত অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমানকে আহব্বায়ক এবং উপজেলা প্রকৌশলী (চ.দা.) আবু তারেক সাইফুল কামালকে সদস্য সচিব ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সামাদকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ‘ইট বিক্রির সত্যতা আছে’ মর্মে ২৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলমের নির্দেশে মামলাটি করা হয়।

 

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গত ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট যেকোনো সময় কোলা বাজারের চান্দিনার সলিং থেকে আনুমানিক ২০-২২ হাজার ইট চুরি করে নিয়ে যায়। যার মূল্য আনুমানিক ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

 

প্রসঙ্গত, দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের কোলার হাটের ইজারাদার মো. বুলু শেখ সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই হাটটি উঁচু করার জন্য সলিংয়ের সরকারি বিপুল পরিমাণ ইট তুলে প্রতি হাজার ইট ৮ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন।

 

এ ছাড়া তিনি হাটে ব্যবসা করার জন্য দোকান প্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ঘর তোলা বাবদ প্রতিটি ‘খুঁটি’র জন্যও ৩শ’ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

 

এ ছাড়া বাজারে দোকান দিতে হলে ইজারাদারকে নতুন করে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে করম আলী মোল্লা, হাবিব শেখ, হুবাইয়া, অছিকার মোল্লা, বাদশা শেখ এবং প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী আফজাল শেখসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী গত ২৯ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আলাদা দুটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version