-->

শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা সমস্যায় ভুগছেন এমন ট্রাফিক পুলিশ ও নিবন্ধিত রিকশাচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ওই চার সিটি করপোরেশনের মেয়র ও পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) আগামী চার মাসের মধ্যে এ তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সোমবার এ আদেশ দেন। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আওলাদ হোসেন।

 

অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করা হয়েছে। রুলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬-এর বিধি ৭ ও ৮ অনুসারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ ও রিকশাচালকদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

 

‘রাজপথে শব্দদূষণ/কানের সমস্যায় বেশি ভুগছে রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশ’ শিরোনামে গত বছর ৯ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট আবেদন করা হয়।

 

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাজীবীদের মধ্যে কানের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা। তাদের মধ্যে ৪১.৯ শতাংশের এ সমস্যা রয়েছে। এর পরেই রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দেশের প্রায় ৩০.৭ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন মাত্রায় কানের সমস্যা রয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কানের সমস্যায় ভুগছে কুমিল্লার মানুষ। প্রতিষ্ঠানটির অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা নিজামের গবেষণা প্রতিবেদন ছিল এটি। গত বছর ৮ নভেম্বর ‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

 

গবেষণায় পাঁচ সিটি করপোরেশনে (ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট) শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করার কথা বলা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব এলাকায় রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর (ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাসচালক ও হেলপার, পিকআপচালক, সিএনজিচালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরবাইকচালক, রিকশাচালক এবং সেডান/এসইউভি চালক) শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়েছে। লেগুনার চালকদের ২৩.৯ শতাংশ কানে শোনার সমস্যায় ভুগছে।

 

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন বিবেচনায় কানে শোনার সমস্যা সবচেয়ে বেশি কুমিল্লার মানুষের। এ এলাকার রাজপথে চলাচলকারীর প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষের কানের সমস্যা রয়েছে। সিলেটে ৩০.৭ শতাংশ, ঢাকায় ২২.৩ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১৩.৯ শতাংশ। সিটি করপোরেশনগুলোর রাজপথে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবল, যা অনুমোদিত মাত্রা ৬০ ডেসিবলের চেয়ে বেশি। গবেষণা জরিপে অংশ নেয়া প্রতি চারজনে একজন বা প্রায় ২৫.৪ শতাংশ মানুষের কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছে। এদের ৭ শতাংশেরই এ মুহূর্তে হিয়ারিং এইড ব্যবহার জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version