-->
হাইকোর্টের রায়

ধানমন্ডির ৩শ কোটি টাকার বাড়ি সরকারের, কোনো ব্যক্তির নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধানমন্ডির ৩শ কোটি টাকার বাড়ি সরকারের, কোনো ব্যক্তির নয়

প্রায় ৩০০ কোটি দামের রাজধানী ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের ২৯ নম্বর বাড়িটি সরকারের বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেন। পৃথক দুটি রিট মামলা নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয়া হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান। আবেদনকারী নেহাল আহমেদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আবুল হাসেম।

 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান জানান, ধানমন্ডি ২নং রোডের আলোচিত ২৯নং বাড়ি ১৯৭২ সালে তৎকালীন মালিক বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় সরকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরে ওই সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে ১৯৮৯ সালে সাংবাদিক তোয়াব খান, আবেদ খান ও অন্যরা প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টে মামলা করেন। সাক্ষ্য ও পক্ষদ্বয়ের কাগজপত্র ও সরকারি নিবন্ধক দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্ট ওই সম্পতি সরকারের বলে রায় দেয়।

 

এই রায় বহাল থাকা অবস্থায় এস. নেহাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ১৯৮৭ সালের আবেদন দেখিয়ে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টে ১৯৯৬ সালে মামলা করেন। এ মামলায় সরকারের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়নি। প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্ট নেহাল আহমেদের পক্ষে রায় দেয়। এই রায় বাস্তবায়নে এস. নেহাল আহমেদ হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেন। এই মামলাগুলোতে সরকারের পক্ষে আদালতে প্রকৃত তথ্য উপাত্ত দাখিল না করায় হাইকোর্ট পুনরায় এস. নেহাল আহমেদের পক্ষে রায় দেন। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ দেরিতে আপিল করায় আদালত আপিল তামাদি ঘোষণা করে খারিজ করে দেন।

 

পরে পুরো বিষয় সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এলে ২০১৮ সালে প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টের ১৯৯৭ সালের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত সরকারের পক্ষে রুল জারি করেন। রুলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, প্রথম সেটেলমেন্ট কোর্টের ১৯৯৭ সালের রায়টি প্রতারণামূলকভাবে ১৯৯৬ সালে তামাদির মেয়াদকে পাশ কাটানোর জন্য ১৯৮৭ সালে দায়ের দেখিয়ে আদেশ নিয়েছে। এমন প্রতারণার কারণে ও মালিকানার স্বপক্ষে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকায় ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।

 

আদালতকে আরও বলা হয়, এস. নেহাল আহমেদ দাবিকারী ব্যক্তি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন বা বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। আবার বর্তমানে দাখিল করা এস. নেহাল আহমেদ নামের জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্ণিত নামের বানান, বাবার নামের বানান ও বয়স বর্ণিত সম্পত্তি পরিত্যাগকারী এস. নেহাল আহমেদের নামের সঙ্গে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। এ কারণে এস. নেহাল আহমেদের পক্ষের রায় বাতিলযোগ্য।

 

পক্ষান্তরে নেহাল আহমেদের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, সরকারের পক্ষে ২২ বছর বিলম্বে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, মামলা দায়েরে কোনো সময়সীমা নেই। তবে যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে দায়ের করা সমীচীন। আরো বলা হয়, একই সম্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও সমর্থনীয় কাগজপত্র ছাড়াই সাংবাদিক আবেদ খান তাদের বিরুদ্ধে সেটেলমেন্টের কোর্টের রায় গোপন করে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে রিটটি করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version