-->
অর্থ পাচারকারীদের ধরতে আরো ক্ষমতা চায় দুদক

দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন দুদক চেয়ারম্যান

ধর্ষণের মামলায় যেমন ধর্ষকের পক্ষে আইনজীবীরা দাঁড়ান না, তেমনি বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিচারের সময় সিনিয়র আইনজীবীরা যাতে আদালতে না দাঁড়ান, সেজন্য জনমত তৈরিতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

 

তিনি বলেন, বড় বড় দৃনীতিবাজরা আদালতে সিনিয়র আইনজীবী রাখে। ফলে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে দুদকের আইনজীবীরা পেরে ওঠে না।

 

দুদকের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। এসময় দুদকের কমিশনার(অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও কমিশনার(প্রশাসন) মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

 

দুদক চেয়ারম্যান বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তুলে ধরে বলেন, ইচ্ছা থাকলেও আইনি জটিলতার কারণে সব কাজ করতে পারি না। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে দুদক সরাসরি অন্য কোনো দেশের কাছে তথ্য চাইতে পারে না। তথ্যের জন্য আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর কাছে আবেদন করতে হয়। এরপর যেতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে। সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে দূতাবাসের কাছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।

 

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য-উপাত্ত জোগাড়ের পর যখন সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয় তখন তারা সেটা দিতে অনীহা দেখান। বিশেষ করে দুর্নীতি নিয়ে যেসব দেশ ভাল ভাল কথা বলে তারা তথ্য দিতে চায় না। একারণে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দুদককে অসুবিধায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং নিয়ে দুদক একা নয়, আরো কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। আইন অনুযায়ী এনিয়ে কাজ করা দেশের সাতটি সংস্থার মধ্যে দুদক একটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর), পুলিশ, বিএফআইইউসহ আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠানও কাজ করে। অথচ এবিষয়ে পুরো দোষ পড়ে দুদকের ঘাড়ে। দুদককে দোষারোপ করে বলঅ হয়, দুদক অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারছে না, অপরাধীদের আইনের আওতায় বিশেষ করে বিচারের মুখোমুখী করতে পারছে না। তিনি বলেন, একারণে আইন সংশোধন করে সিডিউল পরিবর্তনের জন্য দুদক একটি প্রস্তাব দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের দায়িত্ব দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রতিরোধের কাজটিতে ভাটা পড়েছে। এটা জোরদার করা হবে। দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ভীতি প্রদর্শন দুদকের কাজ নয়। দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখী করা। তিনি বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের পর একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলে তার সব অধিকার খর্ব হয়ে যায়। হয়তো দেকা গেলো বিচার শেষে তিনি নির্দোষ প্রমানিত হয়েছেন, তাই কাউকে আগেভাগে গ্রেপ্তার করতে চায়না দুদক।

 

দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, এটা সত্য যে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। তবে এই পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে দুদক কাজ করছে। যদিও এটা দুদকের একার দায়িত্ব নয়। দুদক আর ছয়টি সংস্থার পাশাপাশি কাজ করে। বড় অপরাধীদের না ধরে দুদক ছোট ছোট দুর্নীতিবাজদের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক অর্থের মাফকাঠিতে নয়, অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখী করতে কাজ করে।

 

কমিশনার (অনুসন্ধান) জহুরুল হক বলেন, আমরা যেসব কাজ করি তার সব তথ্য আপনাদের কছে যায় না। আর সব খবর প্রচারও করেন না। আপনাদের অভিযোগ, দুদক কেবল চুনোপুঁটি ধরে। এটা সত্য নয়, দুদক কিন্তু কতগুলো রাঘববোয়াল ধরেছে, আপনারা দেখেছেন তা। দুদক বিশ্ব রেকর্ড করার মতো রাঘববোয়ালও ধরেছে। তিনি বলেন, দুদক ২০২০ সালে ৮টি, ২০২১ সালে ১৩টি, ২০২০ সালে ৪টিসহ মোট ২৫টি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া ২০২১ সালে ১টি মামলার চার্জশিট দায়ের করেছে। । যেসব মামলার চার্জশিট হয়েছে আমার বিশ্বাস সেগুলোর ৮০ ভাগ ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version