-->

আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ অবৈধ, ৯ বছর পর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ অবৈধ, ৯ বছর পর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা দেয়া সংবলিত আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ সংবিধান পরিপন্থি ও অবৈধ ঘোষণা করে ৯ বছর আগে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের কপি বুধবার হাতে পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

 

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ সংবিধান পরিপন্থি ও অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় দেন। এর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার পর তাতে স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট দুই বিচারপতি। এরপর বুধবার তার কপি প্রকাশিত হলো। আদালত অবমাননা আইনের আটটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট মামলার ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেয়া হয়।

 

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এখন থেকে যে কারো বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার মামলাগুলো বিচার করবেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে ১৯৩২ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বহাল হয়েছে।

 

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানে দেশের সব নাগরিককে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ আইনে (আদালত অবমাননা আইন-২০১৩) দুটি বিশেষ শ্রেণিকে (সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক) সুবিধা ও নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, যা বৈষম্যমূলক। আইনটিতে আদালতের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ১০৮ ও ১১২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। রায়ে বলা হয়েছে, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনের শিক্ষক কিংবা একজন একাডেমিশিয়ান সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু একজন অজ্ঞ, যার আইনসংক্রান্ত কোনো ধারণা নেই এবং আদালতের কার্যক্রম কীভাবে লিখতে হয় তা জানে না, তাদের বিচারিক বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার অনুমতি দিতে পারি না। রায়ে বলা হয়, আমাদের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সেটা আইনি বিধানসাপেক্ষে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অবারিত হতে পারে না। তাদের একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। সঠিক ও সত্য প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট পরিমণ্ডল থাকতে হবে। সরকার ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন রহিত করে ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন করে আদালত অবমাননা আইন করে। এ আইনের আটটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী (বর্তমানে প্রয়াত) ও অ্যাডভোকেট আয়শা খাতুন ওই বছরই রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই বছরের ৩ এপ্রিল রুল জারি করেন।

 

সরকারি কর্মকর্তাদের তলব করা যাবে না- এমন বিধানসংবলিত আদালত অবমাননা আইনে সংযোজিত আটটি ধারা কেন বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সুবিধা দিয়ে করা ওই আইনের ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৩ (২) নম্বর ধারা নিয়ে এ রুল জারি করা হয়।

 

এদিকে এ রিট আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান (বর্তমানে প্রয়াত) এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খান। তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। এ আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। তবে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য শোনেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আইনটি অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় দেন।

 

রায়ের পর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আইনে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা অবসর গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার অবসান ঘটবে, আদালত অবমাননা মামলার শুরুতেই সরকারি কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া যাবে না, আপিল পর্যায়ে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবেন; নির্দোষ প্রকাশনা আদালত অবমাননা নয় এবং বিচারকদের খাস কামরায় অনুষ্ঠিত বিচারিক প্রক্রিয়ার তথ্য প্রকাশ আদালত অবমাননা নয়। এসব ধারা সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আইনটি বাতিল করে রায় দিয়েছেন। এ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version