logo
আপডেট : ২৬ মে, ২০২৩ ১১:২৬
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে ভিন্ন নামে
মোতাহার হোসেন

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে ভিন্ন নামে

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর থাকছে আসন্ন বাজেটে। তবে প্রচলিত নিয়মে পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতার আদলে বা নামে নয়, বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে।

 

অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত সর্বশেষ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ভিন্নতর এই পদ্ধতি গ্রহণ করছে।

 

এ বিষয়ে এক গবেষক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা।

 

বৈশ্বিক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।

 

সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব বাজারে জ্বালানি সহ প্রায় সব রকম পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, সন্তানদের নিয়ে, পরিবার নিয়ে সংকটে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগ নিচ্ছেন। পাশাপাশি দেশে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় দ্রব্যমূল্যের বাড়তি বোঝার চাপ কমাতেও নেয়া হয়েছে বহুমুখী পদক্ষেপ।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেতন বাড়ানো সম্পর্কে একটি নির্দেশনা দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়।

 

একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে।

 

সূত্র জানায়, চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন।

 

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।

 

বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ওই বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল।

 

এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরো কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে।

 

এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরো খতিয়ে দেখা হবে।

 

চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে বলে আপাতত সিদ্ধান্ত আছে।

 

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে।

 

এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।

 

এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে।

 

আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর পথে হেঁটেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি