logo
আপডেট : ২৬ মে, ২০২৩ ১০:৪৭
প্রসঙ্গ: মার্কিন নতুন ভিসা নীতি
বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ
নিখিল মানখিন

বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ।

 

দলটির নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক তা প্রত্যাশা করে আসছে আন্তর্জাতিক মহল।

 

আর বর্তমান সরকারও সাংবিধানিকভাবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন উপহার দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের বিদ্যমান সম্পর্ক অবনতি ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে আশা প্রকাশ করেন দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেড়েছে বিদেশি শক্তির তৎপরতা। পাওয়া যাচ্ছে বিদেশিদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত। বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতা মোকাবিলা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিদেশিদের কড়া জবাব দিতেও দ্বিধা করছে না দলটি। তিন দেশ সফর শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে তারই প্রমাণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, গত কয়েক বছরে নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বৈদেশিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা সামাল দিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ। তিক্ততা চরম পর্যায়ে যাওয়ার আগেই দলটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সুনজরে পড়েছে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকার। বাংলাদেশে আগমন ঘটছে বিশ্বের একের পর এক প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের।

 

২০২২ সালের শেষের দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে শতভাগ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অগ্নিপরীক্ষায় পড়ে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক মহলের আলোচিত খবর ছিল র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি, যা বিদায়ী বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মাঠও উত্তপ্ত করে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে লবিস্ট নিয়োগের কথাও বলেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু নতুন বছরেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি।

 

এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্রিংকেনের বুধবার এক বিবৃতি অনুযায়ী নতুন নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে।

 

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটাই কথা। নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব।

 

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একটা কথা বারবার বলে আসছি। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করব। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে যে বক্তব্য, সেটি নিয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয়। কারণ যারাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবাদুর রাজ্জাক।

 

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। তবে আমি মনে করি এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া এর বাইরে কিছু করছে যুক্তরাষ্ট্র সেটি অ্যপ্রিসিয়েট করবে না।

 

আমরাও বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা যে কোনো মূল্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন করব।

 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি মনে করি এ স্যাংশনটা...আমাদের অনেক অশুভ শক্তি রয়েছে, অসাংবিধানিক গোষ্ঠী রয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমরা সরকার বা আওয়ামী লীগ এটি নিয়ে চিন্তিত না। আমরা আমাদের বিবেক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছি। কাজেই এটি নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। সুনির্দিষ্ট কারো ওপরে তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। কেউ করলে তার ওপর দেবে। সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেটি সঠিক নয়, আমরা সেটি করব না। এমন কিছু করব না, যেটির মাধ্যমে আমাদের কেউ ভিসা থেকে বঞ্চিত হয়।

 

ব্রিংকেনের এমন ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার বিচলিত নয়। এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়।

 

এতে সরকার বিচলিত নয়, যেহেতু আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপির দুশ্চিন্তা করা উচিত, কেননা নির্বাচনের আগে বা পরে সংঘাত ভিসা বিধিনিষেধের আরেকটি মানদন্ড হিসেবে রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

 

এদিকে, বাংলাদেশে নির্বাচনে অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে ঘোষণা দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

বুধবার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানায়।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল উল্লেখ করে এতে বলা হয়, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এই সরকারের ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

 

নির্বাচনে অনিয়ম মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। যেসব অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা সতর্ক থাকবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে বলে সরকার আশা করছে।

 

ভোরের আকাশ/নি