logo
আপডেট : ২১ মে, ২০২৩ ২১:৫৮
সার্বজনিন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬ তম বার্ষিক সম্মেলন শুরু, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ জীবনধারায় ফেরানোর তাদিগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬ তম বার্ষিক সম্মেলন শুরু, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ জীবনধারায় ফেরানোর তাদিগ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব ডা. তেদরোস আধানমস গ্রাবিয়াসুস

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬ তম বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য “সবার জন্য স্বাস্থ্য” । স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অতিমারী ‘করোনা’র বন্দি দশার তিন বছর পর এবারই উন্মুক্ত পরিসরে হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলন। সম্মেলনের প্রথম দিন রোববার দুপুর ২টায় উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলন চলবে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত ।

 

এবারের এই সম্মেলনে রোগ প্রতিরোধে শারীরিকভাবে সচল থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ জীবন ধারায় ফেরানোর তাদিগ দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব ডা. তেদরোস।

 

স্বাস্থ্য অধিকার মানবাধিকার। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মাধ্যমে এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সমাজে সব শ্রেণির মানুষ তার প্রয়োজন অনুসারে যে কোনো অবস্থায় যে কোনো স্থানে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। অবশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য-প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ। সম্মেলনের প্রথম দিনের সূচনা হয় "ওয়াক দ্য টক"-এ যার অর্থ দাঁড়ায় কথাকে কাজে পরিনত করার বিষয়ে আলোকপাত করা।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান খেলোয়াড়, যুবক ও সফল নারী তারুণ্যকে সম্মাননা জানানো হয়। এ সময় নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিকা বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য তথ্য বিশেষ করে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার কৌশল ও তথ্যগুলো সবাইকে জানাতে হবে এবং তা সবাইকে প্রচারের দায়িত্ব নিতে হবে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব ডা. তেদরোস আধানমস গ্রাবিয়াসুস তার বক্তব্যে বিশ্বের সকল মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিতে প্রতেককে শারীরিকভাবে ভাবে সচল থাকার পরামর্শ দেন। রোগ মুক্ত বিশ্ব গড়তে তরুণ প্রজন্মকে এখন থেকে তাদের খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রতি আহবান জানান তিনি।

 

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক এই সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক-এর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত শনিবার ডব্লিউএইচও সদর দফতর জেনেভায় পৌঁছেছেন।

 

উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সার্বজনিন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারেরও একটি লক্ষ্য। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করছে সরকার। একই সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায় থেকে এবং পরবর্তীতে প্রবীনদের যেন অন্তভুক্ত করা যায় সে লক্ষে কাজ চলছে। এ জন্য বড় ধরণের বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

 

জাহিদ মালেক বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে কমিউনিটির ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ভালো ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা ইউনাইটেড নেশনসসহ বিশ্ব জুড়ে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পরের ধাপ তথা মান সম্মত সেবার নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছে।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যখাতে অধিক বিনিয়োগ জরুরি। সব দেশ ও সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যবান ও ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী গড়ে তুলতে সমন্বিত প্রচেষ্টাই সম্মেলনের উদ্দেশ্য।

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, শুধু ওষুধেই সুস্থতা নয়, শারীরিক কসরত হাঁটা ও বায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে। পাশাপাশি শুধু আমি সুস্থ থাকলে হবেনা অন্যদেরও সুস্থ থাকার বার্তা দিতে হবে।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সূচনা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হওলাদার, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব আঞ্জুমান আরা, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসাপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. রেয়াজুল হক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারি কায়সার হামিদ এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এনএনএস) মো. মফিজুল ইসলাম বুলবুল।

 

উদ্ভোধনের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ইন্দ্রোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার সকাল ১০টায় ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডিচেন ওয়াংমো’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সকাল সাড়ে ১১টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা সেক্রেটারি জেভিয়ার বেসেরার সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। একই দিন বেলা ২টায় গুগলের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কারেন ডিসালভোর সঙ্গে বৈঠক, ওই দিন বেলা আড়াইটায় মরক্কোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আইট তালেবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে।

 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল ৮টায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কমনওয়েলথ যুব নেতৃবৃন্দ ও পলিসি মেকারদের নিয়ে আলোচনা রয়েছে। যার পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ। ওই দিন সকাল ১০টায় শ্রীলঙ্কার এবং সাড়ে ১১টায় ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে। একই দিনে বেলা ১টায় ডব্লিউএইচও এবং গ্লোবাল কমিশন অন ড্রাগ পলিসি শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত থাকবেন। পরে সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড আয়োজিত এক্সিলারেটিং অ্যাকশন গন গ্লোবাল ড্রনিং প্রিভেনশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

 

চতুর্থ দিন বুধবার সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনের পরিচালক মনোনয়ন অভ্যার্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বেলা ৩টায় মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ৪টায় গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট অন বিল গেটস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ক্রিস ইলিয়াসের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

 

৫ম দিন বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে ডব্লিউএইচও শুভেচ্ছা দূতদের বৈঠক রয়েছে। সম্মেলনে প্রতিদিনই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডব্লিউএইচও’র নীতি-নির্ধারনীতে ভূমিকা রাখবে দলটি।

 

এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৩ টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্যবিদ, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। প্রতিনিধিরা এবাবের বার্ষিক সস্মেলনে বিভিন্ন সেশনে নিজ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি ও উন্নয়ন ও দুর্বলতার বিষয়গুলো উপস্থাপন করবেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা