logo
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৭
রমজানে মাঠে বিএনপি
এম. সাইফুল ইসলাম

রমজানে মাঠে বিএনপি

এম. সাইফুল ইসলাম: ঈদের পর পরই বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এবার রমজানেও মাঠের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। অন্যবার রমজানে ইফতার-রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দলটি এবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে। যার অংশ হিসেবে গোটা রমজানজুড়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, বেশ আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচিতে রয়েছেন তারা। তাই কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও গতি বাড়াতে এবার রমজানেও রয়েছে মাঠের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ঈদ-পরবর্তী সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তারা।

 

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনমুখী বিএনপি ২০২২ সালের জুলাই থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে।

 

বিশেষ করে জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে রয়েছে রাজপথের এই বিরোধী দল। একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও ছিল। সারা দেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাট-বাজারে কর্মসূচি পালন করে।

 

এসব কর্মসূচি পালনের পর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করে বেশ চাঙ্গা হয় দলটি। সমাবেশের বেশিরভাগেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তবে আলোচনার তুঙ্গে ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ।

 

নয়াপল্টনে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারসহ নানান ঘটনার জন্ম হয় ওই সমাবেশ ঘিরে।

 

অবশেষে ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়া দলগুলো এখন যুগপৎভাবে মাঠে রয়েছে। কয়েকটি জোট, দল ও সংগঠন এখন বিএনপির সঙ্গে এ আন্দোলনে যুক্ত।

 

বিএনপি ও তার শরিকরা এখন পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে। ইতোমধ্যে দলটি ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব কর্মসূচি পালন করেছে।

 

তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, ডিসেম্বর নাগাদ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নভেম্বরে তফসিল হতে পারে। তাই দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে বিএনপিকে আগামী জুন বা জুলাইকে ঢাকাকে আন্দোলনের ‘রোডম্যাপ’ ধরে মাঠে নামতে হবে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘এক দফার আন্দোলন’ যখন শুরু হবে, তখন ওয়ার্ড, ইউনিয়নসহ সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

সে লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবার পবিত্র রামজানজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রথম রমজানের ইফতার পার্টিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ এপ্রিল শনিবার সারা দেশের সব মহানগর ও জেলায় অবস্থান কর্মসূচি। ৮ এপ্রিল শনিবার সারা দেশের সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি।

 

এছাড়া ১০ দফা, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত, সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগ, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ ও ১৬ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র বিলি, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

 

এছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে দলটি। পাশাপাশি অসহায় মানুষকে সহায়তাসহ গণসংযোগমূলক কর্মসূচিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণেরও নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

 

অর্থাৎ রমজানে প্রায় মাসব্যাপী বিএনপির কর্মসূচি রয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, কর্মসূচির ছন্দপতনে যেন নেতাকর্মীরা মাঠ থেকে দূরে সরে না থাকে, তার জন্যই এবার রমজানে কর্মসূচি। তাছাড়া আসন্ন ঈদের পর দলটির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’র আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে বলেও জানা গেছে। সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে রমজানেও নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে বিএনপির এসব কর্মসূচি।

 

কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ ২ রমজান মহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, মানুষের কিছুটা কষ্ট জেনেও রমজানে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এবার রমজানের মধ্যেও কর্মসূচি বলে মন্তব্য তার।

 

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ভোরের আকাশকে বলেন, এই মুহূর্তে মাঠে থাকার কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই এবারের রমজানে মাঠে কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি ঈদ-পরবর্তী আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে দল আন্দোলনে আছে। সময় বুঝে এবং জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। সেই গুরুত্বের জায়গা বিবেচনা করে এবার রমজানে কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।

 

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। আগামীতে আরো কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতিতে রমজানের কর্মসূচি।

 

ভোরের আকাশ/নি