logo
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০২৩ ১৯:২৪
রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, দাম ১০ থেকে ৫১ শতাংশ বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, দাম ১০ থেকে ৫১ শতাংশ বেশি

ফাইল ফটো

রমজানের শুরুতেই নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন। প্রথম দিন শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা সবজিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। আগুন জ্বলছে মাংসের বাজারেও। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবারের রমজানে প্রতিটি পণ্যের দাম ১০ থেকে ৫১ শতাংশ বেশি রাখা হচ্ছে। এবার রমজান শুরুর আগেই জিনিসপত্রে দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। রমজান শুরুর আগে যেসব পণ্যে দাম কিছুটা কম ছিল শুক্রবার দেখা যায়, এসব পণ্যে সব বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত রমজানকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগেই বেড়েছিল। এর মধ্যে মুরগির মাংসসহ কয়েকটি পণ্যের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, তারা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনছেন, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

এদিকে দ্রব্যমূল্য এমন লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। একেকটি পণ্যের দাম শুনে বেশিরভাগ ক্রেতা চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিমাণে কম কিনে বাড়ি ফিরছেন। অনেকজ ক্ষেত্রে বাজারের তালিকা থেকে কাটছাঁট করছেন।

 

রামজানের প্রথম দিনে শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন দেশে-বিদেশি ফলের দামও। বাজারে ফলের সরবারহ রয়েছে পর্যাপ্ত থাকলে দামে বেশ চড়া। আগের দিনের চেয়ে দাম বেড়েছে বেশিরভাপ কাচা সবজির। এক সপ্তাহের ব্যবধানের বেগুনের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। গত সপ্তাহে বাজারে লম্বা বেগুনের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। শুক্রবার রমজানের প্রথম দিনে বেগুনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুনের দামও আকাশছোঁয়া।

 

টিসিবির তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি লাল বেগুন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া এক মাস আগে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি গত বছর এ সময়ে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ফলে এক বছরে ২৭.২৭ শতাংশ বেড়েছে বেগুনের দাম।

 

একইসঙ্গে দাম বেড়েছে শসার। গত সপ্তাহে শসার কেজি ছিল ৪০ টাকায়। সেখানে রোজার শুরুতই ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ১ কেজি শসা। শসার সঙ্গে দাম বেড়েছে লেবুরও। আকারভেদে প্রতি হালি লেবুর দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা গেছে। কেজিপ্রতি উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। লাউয়ের বাজার বেশ চড়া। প্রতিটি মাঝারি সাইজের লাউ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে কাচার বাজারের মধ্যে এখনো কিছু স্বস্তি রয়েছে পেঁপের দামে। প্রতি কেজি পেপের দাম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এক সপ্তাহ আগে পেপের কেজি ছিল ২৫ টাকায়। তবে দাম বাড়লেও তা এখনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি বাজারের মিষ্টিকুমড়া জোগান রয়েছে বেশ। এ মিষ্টিকুমড়া কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ১ কেজি কুমড়ার দাম রাখা হচ্ছে ৪০টাকা দরে। এক আঁটি সবুজ শাকের ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পাশাপাশি সবুজ শাকের কদর বাড়ছে গরমে শুরুতে। শাকের আঁটির ২৫ থেবে ৩০ টাকায় বিক্রি করদে দেখা গেছে।

 

মিরপুরের সবজি বিক্রেতা মো. মাহবুব বলেন, ‘রোজা শুরুতের শসা আর বেগুনের দাম বেড়েছে। আগের দিন বেগুন ৬০ টাকা কিনে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ পাইকারিতেই কিনেছি ৮০ টাকায়। তো ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি না করলে তো পোষাবে না। আর গতকাল ৫৫-৬০ টাকায় কেনা শসা ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। শসা পাইকারিতেই কিনতে হয়েছে ৭০ টাকায়। এখন ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করলে তো টিকতে পারব না। মাংশের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই চড়া। বলতে গেলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারপরও রমজান শুরু সময় এটি আরো এক দফা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

 

মিরপুরের ১ নম্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি দোকাকে গরুর মাংশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। সোনালি মুরগি আকারভেদে ৩৬০ থেকে ৩৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দর ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কমে ১৩৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। রমজান শুরু হতেই আর এক দফা দাম বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিমের দাম এখন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে সপ্তাহজুড়েই আলোচনায় রয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় ট্রিপল সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যায় ব্রয়লারের দাম। তবে গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী সংগঠনের সভায় ব্রয়লারের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। তাদের প্রতিশ্রুতি কিছুটা বাস্তবায়ন বাজারে দেখা গেছে। এখন কিছুটা কমে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। তবে ক্রেতারা বলছে এ রমজানে ২৫০ টাকার কেজি ব্রয়লার কিনে খাওয়ার মতো সাধ্য তাদের নেই।

 

এদিকে রমজানের প্রভাব লক্ষ করা গেছে ফলমুলের বাজারেও। ইফতারে আবশ্যকীয় আইটেম হলো ফলমূল। দেশের বাজারে বিদেশি ফলে আধিক্য সবসময় বেশি। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। তবে দেশি ফলে মৌসুম প্রায় সমাগত। ফলে তরমুজসহ অনেক দেশি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ইফতার ও সাহরিতে কলার চাহিদা রোজার শুরুতে বেড়েছে। সেইসঙ্গে বাজারে এসব দ্রব্যের দামও বেড়েছে। রাজধানীর প্রতিটি বাজারের এখন তরমুজে ভরপুর। দাম বেশ চড়া। গত বছর থেকে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এবার রোজার শুরুতে প্রতি কেজির তরমুজের দাম রাখা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারের বিভিন্ন সাইজের তরমুজ রয়েছে। ছোট্ট একটি তরমুজের ওজন ৭ কেজি পর্যন্ত। ফলে এ সাইজের একটি তরমুজ কিনতে পকেট থেকে বের করতে হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি। এ দামে তরমুজ কিনে খাওয়া নিম্নবিত্তের পক্ষে কষ্টকর মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে রোজায় এক ডজন কলা বিক্রি করতে দেখা গেছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। বিদেশি ফলের মধ্যে ১ কেজি আপেল বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকায়, মাল্টা ২৪০, আঙুর ২২০, কমলা ১৮০ থেকে ২২০ ও চেরিফল ৩৮০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রত্যেকটি ফলের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ, যা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো কঠোর ও বাস্তবসম্মত না হলে বছরে বছরে দাম এভাবে বাড়বেই যাবে। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দেয়া দরকার।

 

ভোরের আকাশ/আসা