দেশের কারা হাসপাতালগুলোতে সকল শূণ্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ প্রশ্নে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। আদালত তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এদিকে কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগের চূড়ান্ত বিধিমালা করার বিষয়ে তিনমাসের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জে আর খান রবিনের করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। ডিজির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। কারা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শফিকুল ইসলাম।
হাইকোর্ট গত ১৩ ডিসেম্বর এক আদেশে ৭ জানুয়ারির মধ্যে কারাগারে ৪৮ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এ আবেদনে গত ১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে তলব করেন হাইকোর্ট। এ আদেশে নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টে হাজির হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি আদালতের আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তিনি আদালতকে জানান, তার চাকরির মেয়াদ শেষ হবার প্রেক্ষাপটে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানোর পর নিয়োগ সম্পন্ন করেছি।
অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম আদালতকে জানান, ১৪১ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৬ জন ইতিমধ্যে যোগদান করেছেন। বাকী ৫ জন শিগগিরই যোগদান করবেন। এ অবস্থায় আদালত উল্লেখিত আদেশ দেন।
কারা হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জে আর খান রবিন এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০১৯ সালে পৃথক দুটি রিট আবেদন করে। রিট আবেদনে ওই বছরের ২৩ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি দেশের কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্যে কারা হাসপাতালগুলোতে কত চিকিৎসক প্রয়োজন, তা জানাতে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চিকিৎসক নিয়োগের বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন দিয়ে জানানো হয়, কারা হাসপাতালগুলোতে মোট ডাক্তার প্রয়োজন একশ ৪১জন। বর্তমানে আছেন ২৪ জন। পরবর্তীতে আরো একশত ১৭জন নিয়োগ দেয়া হবে।
এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেদিনই (২৯ জানুয়ারি, ২০২০) হাইকোর্ট পৃথক এক আদেশে কারা হাসপাতালগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে ১১৭ জন চিকিৎসক নিয়োগে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এই আদেশ কার্যকর বিষয়ে একমাসের মধ্যে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ৪ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ মার্চ আরো ৫৩জন চিকিৎসককে কারা হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস জনিত কারণে জরুরী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বেশ কিছু চিকিৎসক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছে। এ অবস্থায় একসঙ্গে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক সংযুক্তিতে কারা হাসপাতালে পদায়ন করলে হাসপাতাল সমূহের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা ব্যহত হতে পারে। তাই আসন্ন করোনা ভাইরাস সংকট নিরসনের পর পর্যায়ক্রমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসক দেয়া হবে।
এ অবস্থায় ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিয়ে জানানো হয়, দেশের কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা একশত ১২জন। কিন্তু এরই মধ্যে নিয়োগ পাওয়া ডাক্তারদের প্রত্যাহার করে নেয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন করে রিটকারীপক্ষ। এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে শূণ্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে শুনানি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিকে তলব করা হয়।
ভোরের আকাশ/আসা