logo
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২২ ১৫:৪০
পদ্মা সেতু : বাগেরহাটে ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটনশিল্প
মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট

পদ্মা সেতু : বাগেরহাটে ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটনশিল্প

পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনাময় জেলা বাগেরহাটে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে এ জেলায়। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি দীর্ঘদিন। তবে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এবার নতুন আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়কপথ। আর এই সড়কপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থানায় ব্যবসা-বাণিজ্যে পণ্য পরিবহণে যাতায়েতে মাওয়া-ঘাটে যানজট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাসহ নানা বিড়ম্বায় পড়তে হতো। সময়মতো পৌঁছানো যেত না গন্তব্যে।


যা বলছেন ট্যুরিস্ট গাইড ও ব্যবসায়ীরা


বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের বাসিন্দা ট্যুরিস্ট গাইড নিয়ামুল ইসলাম বলেন, বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম হবে প্রায় বছরজুড়ে। বাগেরহাটে আসতে মাওয়া ঘাটে জ্যামসহ নানা কারণে ইচ্ছা থাকলেও পর্যটকরা সহজে আসতে পারত না। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জেলার পর্যটন স্পটগুলোর আশপাশে উন্নতমানের কোনো খাবার হোটেল ও থাকার ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।


নিয়ামুল বলেন, আশা করছি এ সমস্যাগুলো আর থাকবে না। ভ্রমণপিপাসুরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের ভ্রমণ শেষে ফিরে যেতে পারবে। এ ছাড়া পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেলে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে নানা স্থাপনা তৈরি হবে। হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।


বাগেরহাট খানজাহান আলী (র.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম ছাড়া বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারণে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এখন বছরজুড়ে পর্যটকদের আগমন ঘটবে বাগেরহাটে। চাপ থাকবে হোটেল-মোটেলগুলোতে। নতুন নতুন হোটেল-মোটেল তৈরি হবে, বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবে সরকার।’


রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে ষাটগম্বুজ মসজিদে


পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করছেন বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাপ বাড়বে মসজিদের শহর বাগেরহাটে। এত দিন সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীদের আগমন কম ছিল। এখন দর্শনার্থীরা একই দিনে ভ্রমণ করে আবার ফিরে যেতে পারবে।’


পর্যটকদের চাপ সামলাতে পূর্ব সুন্দরবনে নতুন চারটি পর্যটন স্পট


পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়বে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে। এ কারণে পর্যটকদের কথা বাড়তি বিনোদন দিতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও পশ্চিম সুন্দরবনে তৈরি করা হচ্ছে চারটি নতুন পর্যটন স্পট। নতুন এ পর্যটন স্পটগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেই ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের রূপবৈচিত্র্য উপভোগ করার পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ পাবেন বলে দাবি করছেন বাগেহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন।


তিনি বলেন, ‘পর্যটনশিল্পের বিকাশে পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের আগমন কম ছিল। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ সমস্যা আর থাকছে না। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে সুন্দরবনে আসতে পারবে। এ কারণে পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাবে দুটি ও পশ্চিম সুন্দরবনে দুটিসহ মোট চারটি নতুন ট্যুরিস্ট স্পট তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে যে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো রয়েছে, সেগুলোর ওয়াচ টাওয়ার, ফুট ট্রেইলার, গোলঘর ও পাবলিক টয়লেটসহ অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করা হচ্ছে।’


সরকার কী পরিমাণ রাজস্ব পাবে, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর সুন্দরবনে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন। এ অর্থবছরে পর্যটন খাত থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।’ পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় পর্যটক দ্বিগুণের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও দ্বিগুণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


শুধু ষাটগম্বুজ মসজিদ বা সুন্দরবন নয়, বাগেরহাটে দেখার মতো আরো অনেক স্থাপনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মসজিদের শহর বাগেরহাটকে দেশি-বিদেশি মানুষের কাছে আরো পরিচিত করতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘদিন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আবাসন সুবিধা না থাকায় বাগেরহাট ভ্রমণে দর্শনার্থীদের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় সহজে বাগেরহাটে আসতে পারবেন পর্যটকরা।’


আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাগেরহাটকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে।’


‘ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বিশ্রামাগার নির্মাণ, মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াকওয়ে তৈরি করা নানা বাগেরহাটকে পর্যটকবান্ধব করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১০০ জনকে ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’